March 29, 2024, 6:59 am

সন্তান হত‌্যার মামলা করে ঘরছাড়া বাদী, সাক্ষীর বাড়িতে হামলা

১০ নভেম্বর ২০২০, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

মাগুরায় সন্তান হত‌্যার অভিযোগে মামলা করার পর আসামিপক্ষের ভয়ে আট বছর ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নিহতের বাবা। আদালতে সাক্ষ‌্য দেওয়ায় ওই মামলার প্রধান সাক্ষীর বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মাগুরার শালিখা উপজেলার কুশখালি গ্রামে সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২২ অক্টোবর সকালে ওই গ্রামের মোন্তাজ উদ্দিন (৩৫) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে একই গ্রামের গোলাম সরোয়ার ও তার লোকজন। এ ঘটনায় মোন্তাজের বাবা মতিয়ার রহমান বাদী হয়ে ৪১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দয়ের করেন। সম্প্রতি ওই মামলায় সাক্ষ‌্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, গত ৫ নভেম্বর মামলার প্রধান সাক্ষী সাখাওয়াত হোসেন মাগুরা জেলা জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ‌্য দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আসামিরা আদালত প্রাঙ্গণেই সাখাওয়াতকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। ৮ নভেম্বর রাতে তারা সাখাওয়াত হোসেনের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালান। হামলাকারীরা গহনা, নগদ টাকাসহ বিভিন্ন জিনিস লুটপাট করেন। পরে তারা সাখাওয়াতের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। এর আগে মামলার অপর সাক্ষী শরীফুল ইসলাম ও তার ছেলে হুমায়ুনকে কুপিয়ে জখম করে সরোয়ারের লোকজন। শরীফুল ও হুমায়ুন এক মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সম্প্রতি বাড়িতে ফিরেছেন।

কিছুদিন আগে সাখাওয়াতের স্ত্রী আসমা বেগমকে পিটিয়ে তার হাটু ভেঙে দেওয়া হয়। সরোয়ারের নেতৃত্বে হামলায় অংশ নেন ওই গ্রামের ওলিয়ার, শাকিল, রাসেল, ওহিদার, কায়েম আলী, আতিয়ার, আল আমিন, মশিয়ার, মোসলেম হোসেন, মিলন, মেহেদী হাসান, কামাল হোসেন, বাহারুলসহ অর্ধশতাধিক মানুষ।

মামলার বাদী মতিয়ার রহমান বলেন, ‘নিজের ছেলেকে হারিয়ে এমনিতে আমি কষ্টে আছি। তার ওপর আসামিরা মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে। তাদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে আমি এখন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। কয়েক বছর ধরে আমি নিজের জমিতে চাষ করতে পারছি না। চাষের জন্য মাঠে শ্রমিক পাঠালে তারা শ্রমিকদের মারপিট করে উঠিয়ে দেয়।’

মামলার প্রধান স্বাক্ষী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মোন্তাজ হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার সাক্ষী হওয়ায় আমার পরিবারের ওপর অত্যাচার করছে সরোয়ার ও তার লোকজন। তাদের অত্যাচারে আমি ও মামলার বাদী এখন বাড়িতে যেতে পারছি না।’

কুশখালি গ্রামে সাখাওয়াত হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটক থেকে শুরু করে প্রতিটি স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের চিহ্ন।

সাখাওয়াত হোসেনের স্ত্রী আসমা বেগম বলেন, ‘নারী ও শিশু ছাড়া বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ থাকতে পারছে না। প্রতিপক্ষের লোকজন রাস্তায় বেরিকেড দিয়ে অস্ত্র নিয়ে টহল দিচ্ছে। শিশুরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। পুলিশকে খবর দিলেও তারা কোনো ভূমিকা রাখছে না। এমনকি বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হলেও পুলিশ দেখতে আসেনি।’

তবে অভিযুক্ত গোলাম সরোয়ার বলেন, ‘সাখাওয়াত হোসেনের বাড়ির ছাদ থেকে আমাদের বাড়ির দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হলে বিক্ষুব্ধ লোকজন তাদের বাড়িতে আক্রমণ চালায়।’ সাখাওয়াতের পরিবারের ওপর অত্যাচারের কথা অস্বীকার করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে মাগুরার পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজওয়ান জানান, এ বিষয়ে জানার পর তিনি শালিখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে শালিখা থানায় দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা হয়েছে। কায়েম আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা