April 24, 2024, 1:09 pm

শীত আগমনে ব্যস্ততা বেড়েছে লেপ-তোষকের কারিগরদের

১৩ নভেম্বর ২০২০, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

প্রকৃতিতে শীতের আগমন শুরু হয়ে গেছে। মানিকগঞ্জে দিনের বেলাতে গরমের প্রভাব থাকলেও রাত হলেই বাড়ছে শীতের মাত্রা। রাতে শীত নিবারণে সাধারণ মানুষের লেপ তোষকের চাহিদা বেড়ে গেছে।

ফলে লেপ-তোষকের দোকানগুলোতে প্রতিদিনই নতুন নতুন লেপ তোষক তৈরির অর্ডার বাড়ছে। ফলে এসব দোকানগুলোতে কর্মরত  লেপ-তোষক তৈরির কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। তবে কম্বলের বাজার দখল আর করোনার প্রভাবে লোক সমাগম কম হওয়ায় বিগত বছরের চেয়ে অর্ডার কম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

আলতাফ হোসেন নামের এক কারিগর বলেন, ‘নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে লেপ-তোষক তৈরির অর্ডার বেশি পাওয়া যায়। চলতি বছর নভেম্বর মাসের শুরুতেই বেশ অর্ডার পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এতে করে আমাদের কারিগরদের এসব জিনিস তৈরিতে ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। সারা বছর টুকটাক কাজ করে সংসার চালালেও এ সময়ের বাড়তি আয় করার সুযোগ বেড়েছে।’

মো.বাতেন নামের এক কারিগর বলেন, ‘প্রতিটি জাজিম তৈরিতে মহাজনের কাছ থেকে পাঁচশো টাকা, লেপ ও তোষক তৈরিতে চারশো টাকা মজুরি পাওয়া যায়। গত সপ্তাহ থেকে শীতের প্রভাব শুরু হওয়ায় বেশ ভালোই কাজ পাচ্ছি। তবে সপ্তাহ থেকে ব্যস্ততা বাড়লেও করোনার প্রভাবে গত বছরের তুলনায় কিছুটা কাজ কম হচ্ছে।’

রেখা ব্রেডিং স্টোরের মালিক মো. মহর আলী বলেন, ‘তিন থেকে চার বছর আগেও শীত মৌসুমে প্রায় ১ হাজার লেপ তোষক তৈরির অর্ডার পেতাম। তবে সম্প্রতি বছরগুলোতে কম্বলের বাজার দখলের ফলে অর্ডার কমে গেছে। এখন শীতের সময়ে চার থেকে পাঁচশো লেপ তোষক তৈরির অর্ডার পাওয়া যায়। তবে সম্প্রতি অর্ডার বেড়ে যাওয়ায় লেপ-তোষক তৈরিতে কারিগরেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।’

চাঁন মিয়া ব্রেডিং স্টোরের মালিক চাঁন মিয়া জানান, করোনার কারণে দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকায় লোকসান গুনতে হয়েছে। এছাড়া করোনার কারণে লোক সমাগম কম হওয়ায় বালিশ,তোষক,জাজিমসহ অন্যান্য জিনিসের অর্ডার কমে গেছে।

তবে, শীতের এই সময়ে লেপ তোষকের অর্ডার বেড়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০টি লেপ তোষক তৈরির অর্ডার পাচ্ছি। শীতের এই দুই মাসে পাঁচশো লেপ তোষক তৈরির অর্ডার পাওয়া যাবে। এতে করে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কারিগরদেরও কিছুটা বাড়তি আয় হবে বলেও জানান তিনি।

রায়হানুল হক নামের এক ক্রেতা জানান, রাতে শীতের মাত্রা বেশ বেড়ে গেছে। সামনে শীতের প্রকোপ আরও বাড়তে পারে তাই আগেই লেপ তৈরির অর্ডার দিতে আসছি। এসব লেপ তোষক মোটামোটি ৪/৫ বছর ভাল মতো ব্যবহার করা যায়। কিন্তু দোকানিরা করোনার অজুহাতে দাম একটু বেশি চাইছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

অভিজিৎ সরকার নামের এক এনজিও কর্মী বলেন, ‘বেশিরভাগ কম আয়ের মানুষের কম্বল কেনার সামর্থ্য নেই। তাই শীতের মৌসুম শুরু হওয়ায় এসব দোকানে ভিড় বেড়েছে। কম আয়ের মানুষেরা এসব লেপ তোষক দিয়েই শীত নিবারণ করে। আমিও বাড়ির জন্য লেপ অর্ডার দিতে আসছি। তবে এবার মনে হচ্ছে কারিগররা লেপের মূল‌্য বেশি চাচ্ছেন।  গত বারের থেকে এবার তুলা, কাপড় ও মুজুরি তারা বেশি নিচ্ছেন। ফলে আমার বাজেটের থেকে লেপের দাম বেশি হচ্ছে।’

দাম বেশির কারণ হিসেবে লেপ-তোষক বাননোর সরঞ্জামের পাইকারি মূল‌্য বৃদ্ধির কথা জানিয়ে হাসেম ব্রেডিংয়ের মালিক পিয়ার আহমেদ জানান, শীত মৌসুম শুরু হওয়ায় লেপ তোষকের মূল‌্য একটু বাড়লেও ভালো অর্ডার পাচ্ছি। একেকটা সাড়ে ৪ হাত সাড়ে ৫ হাত লেপ সতেরশো থেকে আঠারশো টাকা, ৪ হাত পাঁচ হাত লেপ নয়শো থেকে চৌদ্দশো টাকা, ৬ ফিট ৭ ফিট তোষক আটশো থেকে নয়শো টাকা, ৫ ফিট ৭ ফিট তোষক সাতশো থেকে আটশো টাকায় বিক্রি করছি।

মানিকগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাসের সিনিয়র সহ-সভাপতি আফসার উদ্দিন সরকার জানান, করোনার প্রভাবে ব্রেডিং ব্যবসায়ীরা অর্ডার না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে শীতের মৌসুমে লেপ তোষকের চাহিদা বাড়ায় দোকানগুলোতে অর্ডার বেড়েছে। ফলে এ মৌসুমে এ ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী ও কারিগরেরা লাভবান হবেন।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা