March 29, 2024, 3:32 pm

গজারিয়ায় দুই সন্তানের জননীকে ধর্ষণচেষ্টার রহস্য উম্মোচন করেছে পুলিশ

২৫ জুলাই ২০২০, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, এম ডি ওসমান,

গজারিয়া প্রতিনিধিঃ ধর্ষন চেষ্টার অভিযোগের রহস্য উম্মোচন করেছে গজারিয়া থানা পুলিশ। শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী শিপন মিয়া ও মহিউদ্দিন আহমেদ বড় কর্তার হুকুমে মাদক ব্যবসার পার্টনার আমির হোসেনের স্ত্রীকে দিয়ে নিরহ প্রবাসী বাবু মিয়াকে ফাঁসিয়েছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে গজারিয়া থানা পুলিশ। নারী নির্যাতনের মামলা থেকে গজারিয়া থানার ওসির বুদ্ধিমত্তায় বেঁচে গিয়েছে প্রবাসী বাবু মিয়া (৩৮)।

পাঁতানো চাচা মোতালেব, শিপন ও মহিউদ্দিনের ছকের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারীকে দিয়ে বাবুকে ফাঁসানোর ফাঁদ পাতে। সেই ফাঁদে বিদেশ ফেরত বাবু মিয়া পা দেয়। ছক অনুযায়ী ঐ রাতে কাশবনের আড়ালে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী শিপন ও মহিউদ্দিন অবস্থান করে। মাদক ব্যবসায়ীর স্ত্রী দুই সন্তানের জননী শিপন ও মহিউদ্দিনের কথানুযায়ী কাশবনে নিয়ে যায় বাবুকে। কিন্তু কিছু করার পূর্বেই শিপন ও মহিউদ্দিন বাবুকে আটকে ফেলে। ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে।

বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের স্থানীয় বাবু মিয়া (৩৮) বিদেশ থেকে বাড়ী আসছে আগামীতে নির্বাচন করবে এমন একটা হাব ভাব প্রকাশ করেছে সে। বাবু মিয়া যাতে আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করার জন্যই বড় কর্তার হুকুমে শিপন ও মহিউদ্দিন মিলে মাদক ব্যবসায়ীর স্ত্রীকে দিয়ে ধর্ষণ চেষ্টার নাটক করানো হয়।

ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, গত ৬ জুলাই মাদক মামলায় তার স্বামী গ্রেপ্তার হন। স্বামীকে জামিন করার উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার মুন্সীগঞ্জ আদালতে যান। মুন্সীগঞ্জ আদালতে গিয়ে তার সঙ্গে দূর সম্পর্কের মামা শ্বশুর একই এলাকার বাবু মিয়ার সঙ্গে দেখা হয়। বাবু মিয়া তাকে মামলায় সহায়তা করার আশ্বাস দেন এবং এক হাজার টাকা দিয়ে সহায়তা করেন। বৃহস্পতিবার রাত ১১টা পর্যন্ত বাবু মিয়া ওই নারীর বাসায় অবস্থান করেন। এদিকে ওই নারী তার বাবার বাড়িতে থাকা দুই সন্তানের কান্নাকাটি খবর পেয়ে সন্তানদের কাছে যেতে চাইলে বাবু মিয়া তাকে সেখানে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ওই নারীর বাবার বাড়িতে যাওয়ার পথে এক কালভার্টের কাছে প্রভীটার বালুর মাঠের কাছে এসে জরুরি কথা আছে বলে তাকে অটোরিকশা থেকে নামতে বলেন। এ সময় ওই নারীকে কালভার্ট সংলগ্ন কাশবনে নিয়ে ধর্ষণচেষ্টা করে বাবু মিয়া। পরে ওই নারীর চিৎকারে শিপন ও মহিউদ্দিন উদ্ধার করে। বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়ে শুক্রবার দুপুরে তিনি গজারিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সালাউদ্দিন জানান, বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ঘাটাঘাটি করে এবং প্রশাসনের সাথে আলাপ করলে বাবু মিয়ার সাথে যে ঘটনাটি ঘটনানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ পাঁতানো ঘটনা। মহিলার স্বামী মাদক ব্যবসায়ী। মহিউদ্দিন ও শিপনও একই পথের পথিক। ঘটনাটি ঘটেছে বড় রায়পাড়ায় মহিউদ্দিন ও শিপনের বাড়ি কাজীর গাও গ্রামে। রাত ১টায় ৩ কিলোমিটার দূর থেকে কিভাবে ধর্ষিতাকে উদ্ধার করতে চলে আসলো এটা এখন সকলের কাছে প্রশ্ন। অপরদিকে শিপনকে পুলিশ ধরে আনে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে। শিপন জানায় তাকে মহিউদ্দিন ফোনে ডেকে নিয়ে গেছে সে কিছু জানে না।

মেয়ের পাতানো চাচা মোতালেব জানান, মেয়ের বাবা আমার চাচাতো ভাই। ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বলে আমি এখন কিছু বলতে পারবো না। স্থানীয় মেম্বার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের সাথে আলাপকালে জানা যায় মোতালেবই মেয়েটিকে নিয়ে প্রাইভেট কারে দিনভর ঘুরাঘুরি করেছে। এই সাজানো ঘটনার সাথে সেই জাড়িত।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. বিল্লাল হোসেন জানান, শুক্রবার ভোরে ভুক্তভোগী ওই নারী তার বাড়িতে এসে ঘটনাটি তাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি তিনি থানা পুলিশ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে জানিয়েছেন।

এদিকে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে অভিযুক্ত বাবু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘ওই নারীর পুরো পরিবার মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা কৌশলে আমাকে ঝামেলায় ফেলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।’

গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল হোসেন জানান, বিষয়টি স্থানীয় কয়েকটি ছেলে পরিকল্পনা করে মেয়েকে দিয়ে ঘটনা ঘটিয়েছে। এই ঘটনার ভিডিও ছবি তুলে ছেলেটির কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশের কাছে অভিযোগের পর পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা এস.আই তানভীর ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে গোপনে তদন্ত করে বিষয়টির সত্যতা উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হই। মেয়েটি এবং ছেলেটি যে ভালো তা বলব না। তবে মেয়ের স্বামী একাধিক মাদক মামলার আসামী। পুলিশ ও সাংবাদিকদের সহায়তায় ঘটনার মূল রহস্য উম্মোচিত হওয়ায় অভিযোগটি এজহারভূক্ত হয়নি। ফলে ছেলেটি কঠিন একটি মামলা থেকে তার জীবন বেঁচে গেল।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা