March 29, 2024, 8:31 am

অনলাইন ক্লাসের বড় বাধা ইন্টারনেটের চড়া মূল্য

২৪ জুলাই ২০২০, বিন্দুবাংলা টিভি. কম,

মোঃপারভেজ দেওয়ান।।

বাংলাদেশে জনসমাগম হয় এমন স্থানের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অন্যতম। করোনা সংক্রামন রোধে সরকার গত ২৭ মার্চ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে।এতে বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস। বন্ধ হয়ে যায় দেশের অন্যতম একটি পাবলিক পরীক্ষা (এইচএসসি)।যা গত ১ এপ্রিল হওয়ার কথা ছিল।

শিক্ষার্থীদের এ ক্ষতি পুশিয়ে নেওয়ার লক্ষে সরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য সংসদ টিভির মাধ্যমে ক্লাসের ব্যবস্থা করে।যা অনেকটা কার্যকর হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ সুফল থেকে বঞ্চিত হয়।পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করতে বলা হয়।কিছুটা বিলম্ব করে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো অনলাইন ক্লাশের প্রক্রিয়া শুরু করলেও তেমন কোন সাড়া পাচ্ছেন না।

ইন্টারনেট চড়া মূল্য ও দূর্বল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাকে এ সমস্যা কারন হিসেবে উল্লেখ করছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।খোজ নিয়ে জানা যায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা মোবাইল ডাটা ব্যবহার করে অনলাইন ক্লাস করে।যার ফলে শুরুর দিকে অনলাইন ক্লাসের প্রতি কিছুটা আগ্রহ থাকলেও ধীরে ধীরে তা কমছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন সিম কোম্পানির ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে।টেলিটক সিমের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে দেখা যায় ৩০ দিন মেয়াদি ৩ জিবি ইন্টারনেটের মূল্য ১৩৯,৫ জিবি ২০১ টাকা,১০ জিবি ইন্টারনেটের মূল্য ৩০১ টাকা।গ্রামীণফোন এর ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা গেছে ৩০ দিন মেয়াদি ১ জিবি ইন্টারনেটের মূল্য ১৮৯ টাকা,৩ জিবির মূল্য ২৮৯ টাকা,৮ জিবি ৩৯৯ টাকা, ১২ জিবি ৪৯৮ টাকা।রবির ১.৫ জিবি ইন্টারনেট এর মূল্য ২০৯ টাকা যার মেয়াদ ৩০ দিন।আবার ২৮ দিন মেয়াদি ২ জিবির মূল্য ২৪৯ টাকা,২৮ দিন মেয়াদি ১০ জিবির মূল্য ৫০১ টাকা।এ প্যাকেজটির মেয়াদ কম হওয়ায় তেমন কোন সুবিধা পাওয়া যায় না।বাংলালিংক গ্রাহকদের ৩০ দিন মেয়াদি প্রতি ২ জিবির জন্য ১৮৯ টাকা পরিশোধ করতে হয়।৩ জিবির জন্য ২৪৯ টাকা,৮ জিবির জন্য ৩৯৯ টাকা আর ১২ জিবির জন্য ৪৯৮ টাকা গ্রাহকদের গুনতে হয়।তাছাড়া এয়ারটেল এর গ্রাহকদের ক্ষেতে ৩০ দিন মেয়াদি ২ জিবির ২২৯ টাকা গুনতে হয়।৩০ দিন মেয়াদি ৭ জিবির জন্য ৪৯৮ টাকা পরিশোধ করতে হয়৷

করোনার প্রভাবে শিক্ষার্থীদের পরিবারের আর্থিক সক্ষমতা অনেকটাই কমেছে। যার ফলে অনেক শিক্ষার্থীদের দ্বারা মোবাইলে ডাটা কিনে অনলাইন ক্লাস করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।তাছাড়া করোনার কারনে অনেক শিক্ষার্থী হারিয়েছেন তাদের টিউশন, যার ফলে তারা অনেকটা আর্থিক সংকটে রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী আরাফাতুল ওসমানীর সাথে কথা হলে তিনি জানান “করোনার কারনে গত ৪ মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যকর বন্ধ।সম্প্রতি অনলাইন ক্লাস শুরু হলেও সেটা আমাদের জন্য খুব যে কার্যকরী হচ্ছে তা কিন্তু না।আমাদের অনলাইন ক্লাসে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকতে পাচ্ছে না।কারন আকাশ চুম্বি ইন্টারনেট এর দাম।এতো দাম দিয়ে ইন্টারনেট ক্রয় করে ক্লাস করার সমর্থ অনেকেরই নাই।তাই বর্তমানে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ইটারনেটের ব্যবস্থা করলে অনলাইন ক্লাসের সুফল পাওয়া যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ “সরকারি তিতুমির কলেজ”এর শিক্ষক জনাব ইব্রাহিম আহসান এর সাথে কথা হলে তিনি জানান বেশ কিছু সমস্যা কারনে অনলাইন ক্লাসের ফল শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না।সমস্যা গুলোর মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো : ১.ইন্টারনেট এর চড়া দাম ( হিসাব করলে মাসিক মোবাইল ইন্টারনেট বিল অনেক পরিবারের পারিবারিক খরচের চেয়ে বেশি হয়)
২. ছাত্রছাত্রীদের সবার অনলাইনে ক্লাস করার জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস নেই।
৩. ছুটির কারণে অনেকেই গ্রামের বাড়ি গিয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সব জায়গায় মোবাইল নেট গতিশীল নয়। অনেক জায়গায় নেট এর গতি অত্যন্ত দূর্বল।
৪. শিক্ষক কর্মকর্তাদের কারো ই অনলাইন ক্লাস ক্লাস নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্ট নেই। ক্যামেরা, সাউন্ড সিস্টেম ইত্যাদি।
৫. অনেক শিক্ষক কর্মকর্তা নিজেদের সামর্থ্য দিয়ে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করে কিন্তু ক্লাস কে প্রাণবন্ত করার জন্য ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি নিশ্চিত না করলে অনলাইন ক্লাস ফলপ্রসূ হয়না।
এর পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু সম্ভাবনাময় সমাধান তুলে ধরেন।সেগুলো হলো:
১. ছাত্র ছাত্রী দের বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে ইন্টারনেট সরবরাহ
২. সম্ভব হলে ট্যাব দেওয়া যেতে পারে।
৩. শিক্ষক কর্মকর্তাদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস সরবরাহ করা
৪. পর্যাপ্ত ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা