April 23, 2024, 8:48 pm

হোমনা সার্কেল ফেসবুক ওয়াল থেকে” মতি চাচার গল্পটা “

১ এপ্রিল ২০২০, বিন্দুবাংলা টিভি. কম,এম এইচ বিপ্লব সিকদার : হোমনা সার্কেল ফেসবুক ওয়াল থেকে” মতি চাচার গল্পটা”- হুবহু তুলে ধরা হলো, শিরোনামহীনঃ ২৩/০২/২০২০ ইং হতে Criminal Intelligence Analysis Course শুরু হয় চলার কথা ছিল ২৫/০৩/২০২০ ইং পর্যন্ত, এফটিআই,সিআইডি, ঢাকাতে। কিন্তু চলমান সমস্যার (করোনা ভাইরাস ) কারনে ২৩/০৩/২০২০ইং বিকাল ০৪:০০ টায় এফটিআই কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিয়ে বিদায় করে দিলেন। সন্ধ্যায় রওনা হলাম কর্মস্হলের উদ্দেশ্যে। এসেই আমার সার্কেলাধীন প্রথমে মেঘনা থানা এবং পরে হোমনা থানার অফিসারদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ও দিকনির্দেশনা প্রদান। পরের দিন সকাল থেকে শুরু করলাম করোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতনতামুলক কার্যক্রম। এখন অফিসে খুব কম বসা হয়, বেশিরভাগ সময় কাটে পথে প্রান্তরে, বাজার ঘাটে। হোমনা উপজেলার প্রধানতঃ চারটি রাস্তা- ১) হোমনা- গৌরিপুর রাস্তা ২) হোমনা, বাগমারা- রাজকৃষ্ণপুর ৩) হোমনা, ঘাড়মোড়া- মুরাদনগর ৪) হোমনা- শ্রীমদ্দি মুলতঃ এই ০৪ টি রাস্তা দিয়ে হোমনা থানা এলাকার সমস্ত গ্রামে যাওয়া যায়। হোমনা উপজেলা সদরের পর সবচেয়ে ব্যস্ততম বাজার হলো রামকৃষ্ণপুর বাজার, যেটা আবার তিনটি থানার মিলনস্থল যেখানে বিখ্যাত ওয়াই (Y)ব্রিজ অবস্থিত। সৌভাগ্যক্রমে হোক বা দুর্ভাগ্যক্রমে হোক বাজারটি আমার সার্কেলাধীন। ০৩ থানার শেষ প্রান্ত হওয়ায় নজরদারি বা তদারকিও একটু কম। সাংবাদিক সৈয়দ আনোয়ার বাজারের ছবি পাঠিয়ে বললেন স্যার আমাদের বাজারে যদি একটু আসতেন। এখন প্রায় প্রতিদিন রামকৃষ্ণপুর বাজারে যাওয়া হয়। আর হোমনা থানার অধিকাংশ এলাকা কাভার করা যায় হোমনা- রামকৃষ্ণপুর রাস্তায় বের হলে। পথিমধ্যে অনেক বাজার পাওয়া যায়, তারমধ্যে উল্লেখ্য বাগমারা, দড়িচর, দুলালপুর, দৌলতপুর এরপর রামকৃষ্ণপুর। হোমনা থেকে বের হয়েই বাগমারা বাজারে প্রথমে সরাসরি একটা চায়ের দোকান দেখা যায়। একজন বয়স্ক মানুষ (বয়স আনুমানিক ৬০/৬৫ হবে) চা, পান, বিড়ি, সিগারেট বিক্রি করেন। প্রথমদিন-দোকানে ঢুকতেই ১০/১২ জন পালিয়ে যায়। চাচাকে ভয়াবহতা সম্পর্কে বুঝালাম, শুধু বলল স্যার ভুল হয়েগেছে। দোকান বন্ধ রাখব। বললাম দোকান খোলা রাখেন শুধু চা বিক্রি বন্ধ করেন। কারণ যেখানে চা বিক্রি হয় সেখানে আড্ডা বা জনসমাগম বেশি হয়।এজন্য বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা যারা মাঠে কাজ করছি চায়ের দোকান খোলা রাখতে নিরুৎসাহিত করছি বা বন্ধ করে দিচ্ছি। দ্বিতীয় দিন- দোকানের সার্টার অর্ধেক খোলা। ভিতরে চাচা একা কিন্তু চায়ের চুলা জ্বলছে। দেখেই বলল বাবা চা বিক্রি করছিনা নিজে খাবো এইজন্য। আবার বুঝালাম। তৃতীয় দিন-একই অবস্থা, বললাম চাচা এবারে সবকিছু থানায় নিয়ে যাব। শুধু জ্বল জ্বল চোখে চেয়ে থাকে কিছুই বলেনা। মনে মনে বলি চাচা চালিয়েযান কিন্তু আড্ডা যেন না হয়। চতুর্থ দিন- আবার অনেক লোকর আড্ডা, জনসমাগম। এবার চাচাকে উচ্চ কন্ঠে বকাঝকা করলাম ( ইতোমধ্য আড্ডাবাজরা পালিয়েছে), চুলো খুললাম। পাশে এসে চিরকুমার মোস্তফা এসে বললেন স্যার এবারের মত মাফ করে দেন। গতকাল ৩১/০৩/২০২০ ইং বিকেলে যাবার পথে দেখলাম চাচার দোকান বন্ধ। আসার পথে ড্রাইভার মকবুল গাড়ি চাচার দোকান ক্রস করতেই ঝাড়ি দিলাম, বললাম দাঁড়াও। বলল স্যার চাচার দোকান বন্ধ। দোকানটা বন্ধ দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল, দোকান বন্ধ হোক এটা চাইনি, চেয়েছি আড্ডাটা বন্ধ হোক। একজন মুরুব্বি মানুষ, যার বেঁচে থাকার অবলম্বন শুধু চা বিক্রি, সে কিভাবে চলবে??? নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল, কোনভাবেই একটু শান্তি পাচ্ছিলাম না। মকবুলকে চাচার খোঁজ নাওয়ার কথা বলতেই বলল স্যার চাচাকে বলেছি, স্যার আগামীকাল থেকে কিছু চাল ডাল দিবে তখন আপনাকে দিবো। উল্লেখ্য যে, কুমিল্লা জেলার সন্মানিত পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিপিএম ( বার), পিপিএম মহোদয়ের দিকনির্দেশনায় আমরা ব্যক্তিগতভাবে প্রতিদিন খেটে খাওয়া কিছু মানুষের মাঝে চাল,ডাল, তেল বিতরণ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। এসপি স্যার আমাদের বার বার অনুপ্রাণিত করেছেন এসময় খেটে মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এরই মধ্যে গত সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার, কুমিল্লা মহোদয় নচিকেতা’র সেই বিখ্যাত গান, ” ছেলে আমার মস্ত বড় মস্ত অফিসার….. ” ভিডিও গানটি আমাদের WhatsApp group – এ পোস্ট করেছেন। গানটি দেখার পর অপরাধবোধ আরো বেড়ে গেল। ঠিকভাবে ঘুমাতেও পারিনি। মনে হচ্ছিল চাচার সাথে কখন দেখা হবে। ঘুম থেকে উঠে চাচার দোকানে গিয়ে দেখি চাচা যথারীতি চা বিক্রি করছেন। আর জনসমাগম অন্যান্য দিনের চেয়ে একটু বেশি। চাচা দেখেই বলল স্যার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে সকাল হতে ১২ঃ০০ টা পর্যন্ত চা বিক্রির অনুমতি দেন। আমি ছাড়া রোজগার করার মত কেউ নাই, ছোট ছোট তিন ছেলে আর একমাত্র বিবাহিত মেয়ে সেও আমার কাছে থাকে। আমি গরিব বলে মেয়ে জামাই মেয়েকে ঘরে উঠায় না। কি বলব বুঝতে পারছি না। শুধু দুটো প্যাকেট (চাল, ডাল) হাতে দিয়ে বললাম যতদিন এই অচল অবস্থা থাকবে ততদিন আপনার পরিবারের ডাল ভাতের ব্যবস্থা আমি করব ইনশাল্লাহ। আজ আর চা বন্ধ করার কথা বলিনি। অনেকই হয়তো মনে করবেন- প্রচার, প্রসার ইত্যাদি। দয়া করে ভুল বুজবেন না। মতি চাচার মত আপনার / আমার আনাচে কানাচে শত শত মানুষ আছেন, যাদের জীবন অচল হয়ে গেছে, যাদের জীবন থেমে যাবে করোনা ভাইরাসে নয়, খাবার অভাবে। তাদেরকে যতই মৃত্যুর ভয় দেখান, তারা নিশ্চিত মৃত্যু জেনেই ঘর থেকে বের হয়। আসুন সবাই সমস্যা চিহ্নিত করি সমাধানের চেষ্টা করি। তাই সমাজের বিত্তশালীদের অনুরোধ করছি আপনারা পাশে এসে দাঁড়ান এইসব মানুষদের, এখনই সময়। তাদের উদ্দেশ্য এই পোস্টটি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই যুদ্ধে আমরা জয়ী হবো ইনশাআল্লাহ। “সবাই ঘরে থাকুন, অন্যদেরকে ঘরে রাখতে সহযোগিতা করুন, বাংলাদেশকে নিরাপদ রাখুন” ”


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা