April 25, 2024, 12:19 pm

৬৮ সংস্থায় ‘অলস দুই লাখ কোটি টাকা জমা দিতে হবে সরকারি কোষাগারে

৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯,বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্ট :

স্বশাসিত সংস্থাগুলোর বিভিন্ন ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে থাকা দুই লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা নিজের কোষাগারে আনতে আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে সরকার। স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর উদ্ধৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া আইন-২০১৯ সংক্রান্ত একটি খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

দেশে হরতাল, ধর্মঘটসহ জরুরি অবস্থার মতো বিশেষ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) মাধ্যমে বিশেষ সড়ক পরিবহন সেবা দেয়া হবে এমন বিষয় সংযুক্ত করে বিআরটিসি আইন-২০১৯-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আইনটি চূড়ান্ত হলে ওই সব প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যয়সহ প্রয়োজনীয় টাকা রেখে বাকি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা নেয়া হবে। বর্তমানে ওই সব প্রতিষ্ঠানের অর্থ ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছেই আছে। তিনি বলেন, মোট ৬৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশি জমা টাকা আছে ২৫টি প্রতিষ্ঠানের কাছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কাছে জমা আছে ২১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার কাছে ১৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কাছে আছে ১৩ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের জমা টাকার পরিমাণ ৯ হাজার ৯১৩ কোটি। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) জমা টাকা আছে ৪ হাজার ৩০ কোটি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী এই সংস্থাগুলোর পরিচালন ব্যয়ের টাকা তাদের নিজস্ব তহবিলে থাকবে। তারপর আপৎকালীন ব্যয়ের জন্য পরিচালন ব্যয়ের আরও ২৫ শতাংশ সংরক্ষণ করতে পারবে। প্রতিষ্ঠানের পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও রাখা যাবে। এরপর যে টাকা উদ্ধৃত থাকবে, সেটি সরকারি কোষাগারে জমা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, আমাদের স্বশাসিত সংস্থাগুলোর দুই লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা স্থিতি হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে। এই টাকা কোনো ভালো কাজে বিনিয়োগ হচ্ছে না। সরকারের পলিসি হলো আজকের অনুমোদিত আইনের মাধ্যমে কিছু প্রভিশন রেখে বাকি টাকা সরকারি কোষাগারে নিয়ে আসা হবে। যা জনকল্যাণমূলক কাজে, যেমন আমাদের অনেক প্রজেক্ট রয়েছে, যেগুলো আর্থিক সঙ্কটের কারণে এগোচ্ছে না, সেখানে ব্যয় করা হবে।

সচিব বলেন, স্বায়ত্তশাসিত বা অন্যান্য সংস্থাগুলো পরিচালন ব্যয়, নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ও বার্ষিক ব্যয় নির্বাহের জন্য ২৫ শতাংশ অর্থ সংরক্ষণ করতে পারবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দেশে উদ্ধৃত অর্থ রয়েছে ৬৯টি প্রতিষ্ঠানের। তবে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) বাদ দিলে মোট ৬৮টি প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে ২৫টি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমন- বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ২১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, পেট্রোবাংলার ১৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা, বিপিডিবি বা পিডিপিথর ১৩ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম বন্দরের ৯১৩ কোটি টাকা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চার হাজার ৩০ কোটি টাকা রয়েছে। এছাড়া শিক্ষাবোর্ডগুলোর মধ্যে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড ঢাকা ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের ৪২৫ কোটি টাকা এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হাজার ২৫ কোটি টাকা আছে।

এক প্রশ্নের জবাবে শফিউল আলম বলেন, আইনি অধিকারের কোনো ক্ষুন্ন করা হবে না। সংস্থাগুলোর টাকার প্রয়োজন হলে সরকার সেটা দেবে। স্বায়ত্তশাসনে ও আর্থিক ডিসিপ্লিনে কোনো সমস্যা নেই। যে আইডল মানি আছে, সেটাকে সরকার কাজে লাগাবে।

এর মধ্যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখানে বোর্ডগুলো আছে। যেমন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড, ঢাকা। উনাদের অনেক আইডল মানি আছে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড রয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে। শফিউল আলমের ভাষায়, আকারে ছোট হলেও ধরনের দিক দিয়ে এ আইন হবে সুপারসিডিং। অর্থাৎ, অন্যান্য করপোরেশনের আইনের যাই বলা থাকুক না কেন, তার ওপরও এ আইনের বিধান কার্যকর হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন আইন, ২০১৯-এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত এই আইন অনুযায়ী বিশেষ পরিস্থিতিতে সড়ক পরিবহন সেবা দেয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হরতাল, পরিবহন ধর্মঘট, জরুরি অবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজন, বিশ্ব ইজতেমা, মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ও অনুরূপ পরিস্থিতি হলে বিশেষ সড়ক পরিবহন সেবা। অর্থাৎ, এই সময়ে বিআরটিসির বাস চলবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা ১৯৬১ সালের অধ্যাদেশ। এই অধ্যাদেশের আপডেট করা হয়েছে। ঘষামাজা করে আইনে পরিণত করা হচ্ছে। তবে এখানে খুব বেশি পরিবর্তন হচ্ছে না। এ আইনে একটি শব্দ যুক্ত হয়েছে। সদস্য সচিব শব্দটি দুইয়ের ক-এ যোগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ পরিচালনা পরিষদের সদস্য সচিব।

আইনে নতুন একটি সংযোজন আনা হয়েছে, সেটা ৫ (ড) উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশেষ পরিস্থিতি যেমন- হরতাল, পরিবহন ধর্মঘট, জরুরি অবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশ্ব ইজতেমা, মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ এবং অনুরূপ কোনো পরিস্থিতিতে বিশেষ সড়ক পরিবহন সেবা দেয়ার বিষয়টি নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে। জরুরি কাজটি বিআরটিসির কাজের অংশ হিসেবে নতুন করে সংযোজন করা হয়েছে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা