April 20, 2024, 7:47 am

দোয়ারাবাজারের শিক্ষার্থী শিবপুর ইটখোলা আদরী গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কাজ করতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলো

২৭  আগস্ট ২০১৯, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, এনামুল কবির মু,

দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি::
কলেজে লেখাপড়ার টাকা যোগান দেয়া হলোনা মেধাবী শিক্ষার্থী রমজান আলীর। কর্মক্ষেত্রে যোগদানের দিনই লাশ হয়ে বাড়ী ফিরতে হয়েছে তাকে। সে দোয়ারাবাজার উপজেলার সমুজ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং সুরমা ইউনিয়নের গিরিশনগর গ্রামের শাহ আলমের পুত্র। বাড়ী থেকে কর্মের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার ৪ দিনের মধ্যে এভাবে লাশ হয়ে ফিরতে হবে কেউ ভাবেনি। কিভাবে মৃত্যু হলো তাও জানা নেই শিক্ষার্থী রমজান আলীর মা বাবার। অকালে সবাইকে কাঁদিয়ে এভাবে চলে যাওয়ায় এলাকায় এখন শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারে চলছে শোকের মাতম। মঙ্গলবার সকালে দোয়ারাবাজার উপজেলার গিরিশ নগর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে রমজান আলী কে বাড়ীতে দাফন করা হয়। এসময় ছেলের লাশ দেখে তার মা ফাতেমা বেগম কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পুত্র শোকে বিলাপ করে ছেলে ফিরিয়ে দেয়ার আকুতি জানিয়ে আহাজারি করতে থাকেন। এ দিকে তার মৃত্যু ঘিরে এলাকায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। সুরমা ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মামুনুর রশীদসহ স্থানীয়রা জানান, কলেজ শিক্ষার্থী রমজান আলীর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। শিবপুর উপজেলার ইটখোলা আদরী গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর কর্তৃপক্ষ কিভাবে একজন অপ্রাপ্ত ও অনবিজ্ঞ শিশুকে দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডের পানি ট্যাংকি পরিস্কার করতে দেয়। তাছাড়া তার মৃত্যু কিভাবে, কোথায় হলো এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি। কোনো প্রকার খোঁজ খবরও রাখেননি। অসহায় দরিদ্র পরিবার কে কোনো প্রকার আর্থিক সহযোগিতা ছাড়াই লাশ ভাড়াটে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠিয়ে দিয়ে দায় সেরেছেন। তার মৃত্যু ঘিরে রহস্যের উদ্রেক হওয়ায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সংসারে অভাব-অনটনের মধ্যে কোনো রকম স্কুল গন্ডি পেরিয়ে সে সবে মাত্র কলেজে ভর্তি হয় রমজান আলী (১৬)। বাবা শাহ আলম শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান। তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে রমজান আলী বড় ছেলে। ছোট ছেলের বয়স আড়াই বছর। এক মেয়ে ৭ম শেণিতে পড়ে। এ বছর স্থানীয় টেংরা উচ্চ বিদ্যালয় হতে রমজান আলী সমুজ আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর সে লেখাপড়ার খরচ যোগান দিতে গত বৃহষ্পতিবার পরিবারের কাউকে না জানিয়ে চাকুরীর জন্য একই গ্রামের আব্দুল মালেকের পুত্র রিপন মিয়ার সঙ্গে নরসিংদীতে যায়। সেখানে গিয়ে ফোন করে সে জানায় নরসিংদীতে আছে। কাজের সুবিধা পেলে কাজ করবে। এর পর পরিবারের লোকজন আর কিছু জানেনা। সহপাটি রিপন মিয়া জানায়, গত সোমবার সকারে সেখানকার শিবপুর উপজেলার ইটখোলাস্থ ‘আদরী গার্মেন্টস’ ফ্যাক্টরীর ভেতরে পানির ট্যাংকি পরিস্কারের কাজ পায়। পানির ট্যাংকি পরিস্কার করতে গিয়ে সেখানে বিদ্যুতেপৃষ্ট হয়। পরে তার চিৎকার শুনে অন্যান্য শ্রমিকসহ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর লোকজন তাকে উদ্ধার দ্রæত হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা দিলে সেখানেই পুলিশ তার সুরতহাল রিপোর্ট করে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়। স্থানীয়রা জানান, সোমবার রাতে আদরী ফ্যাক্টরীর নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে করে শিক্ষার্থী রমজান আলীর লাশ বাড়ীতে পাঠানোর পথিমধ্যে রহস্যজনক ভাবে ভৈরবে এসে অন্য একটি ভাড়েটে অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ দোয়ারাবাজারে পাঠানো হয়। আদরী গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর কেউ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। বা লাশ বাড়ী এসেছে কিনা এমন খোঁজখবরও রাখেনি। জানতে চাইলে দোয়ারাবাজার থানার ওসি আবুল হাশেম বলেন, নরসিংদীর শিবপুরে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কাজ করতে গিয়ে কলেজ ছাত্র রমজান আলী মারা গেছে বলে শুনেছি। তবে এ বিষয়ে সেখানকার পুলিশ সব কিছু বলতে পারবে।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা