April 19, 2024, 12:26 pm

গোয়াইনঘাটের চাঁদাবাজ ওসির যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ছিলেন এস আই সুদীপ

৪ জুন ২০১৯,বিন্দুবাংলা টিভি. কম ,

স্টাফ রিপোর্টার ( জকিগঞ্জ) :
ওসি আব্দুল জলিলের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার এস আই সুদীপ। তুচ্ছ কারণে তাকে গালিগালাজ করতেন ওসি। বার বার টাকার জন্য চাপও দিতেন। গত তিন দিন আগে সাব-ইন্সপেক্টরদের মাসিক চাঁদা ওসিকে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন আব্দুল জলিল। কিন্তু সুদীপ ওই টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এরপর থেকে সুদীপকে আরো বেশি মানসিক চাপে রাখেন ওসি। এসব কারণেই এস আই সুদীপ আত্মহত্যা করেন বলে জানা গেছে। রোববার বিকালে এস আই সুদীপের লাশ উদ্ধারের পর নানা তদন্তে ওসি জলিলের কুকীর্তির বিষয়টি ধরা পড়েছে।
আর সুদীপের মৃত্যুর ঘটনায় সিলেট জেলা পুলিশে টালমাটাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সুদীপের বেইজমেট পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে এ নিয়ে ওসি জলিলের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ ঘটনার পর ক্ষোভ সামলাতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। নিহত এস আই সুদীপ বড়ুয়ার বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া থানার সোনাইছড়ি গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত রাবিন্দ্র লাল বড়ুয়া। তিনি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ পুলিশে তিনি ২৮ বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন। চলতি বছরের ১৬ই ফেব্রুয়ারি তিনি সিলেটের গোয়াইনঘাট থানায় বদলি হয়ে কর্মরত রয়েছেন। সুদীপ বড়ুয়ার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস এবং ছেলে বাংলাদেশ নৌবাহিনী চট্টগ্রামের একটি স্কুলে লেখাপড়া করে। এ ব্যাপারে নিহত এসআই সুদীপের মেয়ে শতাব্দী বড়ুয়া গোয়াইনঘাটের কর্মরত সাংবাদিকদের জানান, ‘আমার বাবা গোয়াইনঘাটে বদলির পর থেকে থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল জলিলের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না। মামলার কিংবা তুচ্ছ কোনো ব্যাপারে প্রায়ই আমার বাবাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ এবং চরম মানসিক চাপে রাখতেন ওসি। দিনরাত সমান তালে আমার বাবাকে বাড়তি দায়িত্ব দিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে রাখতেন ওসি আব্দুল জলিল। সর্বশেষ শনিবার আমার বাবার সঙ্গে আমার কথা হয়, তিনি তখনও বলেছেন তিনি আর গোয়াইনঘাট থানায় থাকতে চান না।’ পুলিশ জানায়, গত ৩১শে মে গোয়াইনঘাট থানা থেকে ঈদের ৫ দিনের ভেতর অন্য থানায় বদলি হওয়ার জন্য থানার ওসি আব্দুল জলিল এস আই সুদীপ বড়ুয়াকে ধমক দেন। এরপর সুদীপকে দ্রুত অন্য থানায় বদলির আবেদনও করিয়েছেন বিতর্কিত ওসি আব্দুল জলিল। এবং ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা যদি বদলির কারণ জিজ্ঞেস করলে নিজ জেলায় যেতে চান এটা বলতেও নিহত এস আই সুদীপকে নির্দেশ দেন ওসি। সিলেটের সহকারী পুলিশ সুপার (উত্তর) মাহবুবুর রহমান জানান, লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশ পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। এদিকে গোয়াইনঘাট থানার বিতর্কিত ওসি আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে কোয়ারিতে চাঁদাবাজি, সীমান্ত পেরিয়ে আসা ভারতীয় গরু থেকে ২ হাজার টাকা বখরা আদায়সহ নিরপরাধ জনসাধারণকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করে কারাভোগে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বিতর্কিত এই ওসি ইতিপূর্বে চলতি বছরের ১৬ই জানুয়ারি বুধবার রাতে এই আসনের এমপির সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর বাসায় উপঢৌকন পাঠিয়ে নানা বিতর্কের জন্ম দেন। এ ঘটনায় সারা দেশের গণমাধ্যমে তার বিতর্কিত ভূমিকা ফলাও করে প্রকাশিত হলেও তিনি এখনো বহাল তবিয়তেই রয়েছেন। তার একচ্ছত্র মদতে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠছে শান্তির জনপদ গোয়াইনঘাট। জাফলং পাথর কোয়ারি সাম্প্রতিক সময়ে দুর্ঘটনায় শ্রমিক হতাহতের একাধিক ঘটনা ঘটে। কিন্তু এসব ঘটনায় ইউডি বা দুর্ঘটনার মামলা না নিয়ে আব্দুল মালিক, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড গোয়াইনঘাট উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার, যুবলীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক, রুবেল আহমদসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা রেকর্ড করেন ওসি আব্দুল জলিল। এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজিসহ তাদেরকে মামলায় চার্জশিটভুক্ত করে জেলে পুরারও হুমকি দিচ্ছেন বিতর্কিত এই ওসি। ইতিপূর্বে পার্শ্ববর্তী জৈন্তাপুর থানায় ২০১১ সালে কর্মরত অবস্থায় জনসাধারণকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি, চাঁদাবাজির ঘটনায় এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ করে তাকে অন্যত্র বদলি করতে বাধ্য করান। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানায় কর্মরত অবস্থায় সেখানেও তিনি চাঁদাবাজি, বখরাবাজি, সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে বদলি করা হয়। ২০১৮ সালের ২৭ শে মে আওয়ামী লীগ নেতাদের ম্যানেজ করে গোয়াইনঘাট থানায় বদলি হন ওসি আব্দুল জলিল। থানায় যোগদানের পরই জাফলং এবং বিছনাকান্দি কোয়ারিতে চাঁদাবাজিতে মরিয়া হয়ে উঠেন। তার লাগামহীন চাঁদাবাজি, বখরাবাজির কারণে জাফলং ও বিছনাকান্দি কোয়ারির সাধারণ ব্যবসায়ীরা তটস্থ ছিলেন। এ ব্যাপারে ওসি আব্দুল জলিল সাংবাদিকদের জানান, এস আই সুদীপ বড়ুয়া আত্মহত্যা করেছেন নাকি অন্য কিছু তা তিনি জানেন না। বিষয়টির ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তথ্য দেবেন। ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, মিথ্যা মামলায় জনগণকে হয়রানির বিষয়ে তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
সূত্র-মানবজমিন


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা