April 19, 2024, 9:39 am

১ মে শ্রমিক দিবসঃ খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের রক্তে রাঙা একটি দিন

২৯ এপ্রিল ২০২২ বিন্দুবাংলা টিভি. কম,

[] মিঞা মো.মিজানুর রহমান []

বিশ্বের ৯০ টি দেশে সরকারিভাবে মে মাসের প্রথম দিনটিকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসাবে পালন করা হয়ে থাকে। ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের শ্রমিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের উৎপত্তি হলেও যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক দিবস পালিত হয় সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবার।
১ মে শ্রমিক দিবস। শরীরের ঘাম ঝরানো খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের রক্তে রাঙা একটি দিন । ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকদের মহাসমাবেশে বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হয়, ‘৮ ঘণ্টা শ্রম দিবস ঘোষণা করো’। মালিকরা সমাবেশ দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। শ্রমিকদের উপর পুলিশ লেলিয়ে দেয়। শ্রমিকদের কণ্ঠ স্তব্ধ করতে পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে ১১ জন শ্রমিক শহীদ হন। শিল্প মালিক ধনিক শ্রেণি মনে করেছিল, শ্রমিকদের আন্দোলন স্তব্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের এ ধারণা ভুল বলে প্রমাণিত হলো, যখন বিশ্বব্যাপী এই দিনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করলো।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের দেশে দেশে প্রতি বছর ১ মে সংহতি দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। প্রতিটি দেশের শ্রম আইনে ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু এর বাস্তবায়ন উপেক্ষিত অনেকাংশে। বাংলাদেশেও ৮ ঘণ্টা কাজের সময়সীমা নির্ধারণ থাকলেও বাস্তবে অনেকেই তা মানছেন না। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে,বাংলাদেশে এখনও শ্রমিকদের জন্য সুশৃঙ্খল অনুকূল কর্মপরিবেশ গড়ে উঠেনি।

১ মে’র ক্ষেত্র এক দিনে প্রস্তুত হয়নি। পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের ইতিহাস। শিল্প প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইউরোপ ও আমেরিকার শিল্প মালিকরা শ্রমিকদের জোর করে শ্রম দিতে বাধ্য করতেন। চালাতেন অমানবিক ও নির্মম নির্যাতন। শ্রমিকদের ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কলকারখানায় কাজ করতে বাধ্য করা হতো। বিনিময়ে মজুরি কম দিতেন, যা দিয়ে মানুষের জীবন চলতো না। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে শ্রমিকরা সংগঠিত হতে শুরু করেন। ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে এক দল শ্রমিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। তাদের এ দাবি কার্যকর করার জন্য তারা সময় বেঁধে দেন। কিন্তু কারখানার মালিকরা এ দাবি মেনে নেননি। এ দাবিতে ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে হে মার্কেটে শ্রমিকরা সমবেত হন। শ্রমিকদের সমাবেশের ওপর মালিকরা লেলিয়ে দেয় পুলিশ বাহিনী। ঘটে হতাহতের ঘটনা।
শ্রমজীবী মানুষের আত্মত্যাগ ও আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়কে স্মরণ করে ১৯৮০ সাল থেকে প্রতি বছর ১ মে বিশ্বব্যাপী মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা আইএলও প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের অধিকারগুলো স্বীকৃতি লাভ করে এবং সব দেশে শিল্প মালিক ও শ্রমিকদের তা মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়। বাংলাদেশ আইএলও কর্তৃক প্রণীত নীতিমালার অনুস্বাক্ষরকারী একটি দেশ।

পরিশেষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের প্রতি জানাই- গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। ভালোবাসা বেঁচে থাকুক,উজ্জীবিত হোক- মালিক-শ্রমিক সকলের মাঝে!
সময়ের দাবি- শ্রমিকদের জন্য পৃথিবীতে গড়ে উঠুক- শান্তিময় ও সুশৃঙ্খল কর্মপরিবেশ।
আসুন- সবাই কর্মজীবী মানুষের প্রতি মমতা ও ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিই।

লেখক:
মিঞা মো. মিজানুর রহমান
সহ-সাধারণ সম্পাদক
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল
কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি!


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা