April 27, 2024, 4:07 am

মেঘনা-ফুলদী গিলে খাচ্ছে কারখানা!

২৯ জুলাই ২০২১,বিন্দুবাংলা টিভি. কম,

ওসমান গনি,
গজারিয়া প্রতিনিধিঃ মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা
নৌ চলাচল ও পানি ব্যবস্থাপনার জন্য দেশের অন্যতম প্রধান নদী হিসেবে বিবেচিত মেঘনা ও এর শাখা নদী ফুলদীর একাংশ ভরাট করে জাহাজ মেরামত-নির্মাণ কারখানা গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার দৌলতপুরে ‘থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেড’ নামে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান দুটি নদী দখলের পাশাপাশি দুটি খালও পুরোপুরি ভরাট করে বহুতল বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছে। দখল ও ভরাটের ফলে সংকুচিত হয়ে পড়ায় ফুলদী নদী দিয়ে বড় ধরনের নৌযান চলাচল করতে পারছে না। এতে করে সেখানকার পাঁচটি খাদ্যগুদামসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে।

দুটি নদীর আংশিক দখল ও দুটি খাল ভরাটের পাশাপাশি থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের বিরুদ্ধে দৌলতপুরে অন্তত শখানেক কৃষকের জমি বালি ফেলে দখলেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসীর ভাষ্য, ওইসব জমির দখল ধরে রাখতে দিনরাত ৩০ জন অস্ত্রধারী পাহারা দিচ্ছে সেখানে। মেঘনার মতো গুরুত্বপূর্ণ নদী দখল হয়ে যাওয়ার পরও নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। দখল হওয়া জমির কয়েকজন মালিকের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট একটি রুল জারি করে। চার সপ্তাহের মধ্যে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হলেও এখন পর্যন্ত তা দেয়নি মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি), গজারিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নদী, খাল ও ব্যক্তিমালিকানার জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্র্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সঙ্গে ব্যবসা করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। ইতিমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ তাদের কাছ থেকে একটি টাগবোট, পাঁচটি ক্রেন, একটি ক্রু-হাউজবোট, পাঁচটি বার্জসহ ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম কিনেছে। এছাড়া থ্রি অ্যাঙ্গেলের কাছ থেকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা দামের একটি জরিপ জাহাজও কিনবে বিআইডব্লিউটিএ।
এদিকে থ্রি অ্যাঙ্গেলের পরিচালকদের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির মামলা থাকায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দুবার প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন বাতিল করেছে। প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজারে ৩ কোটি ২০ লাখ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৩২ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চেয়েছিল। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে তাদের আইপিও প্রস্তাব বাতিল করে বিএসইসি।
২০১৯ সালের ৬ মে মুন্সীগঞ্জ জেলার নদী দখলদারদের একটি তালিকা জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনে পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন ডিসি সায়লা ফারজানা। সেখানেও থ্রি অ্যাঙ্গেলের বিরুদ্ধে নদী দখলের অভিযোগের সত্যতা মেলে। ওই তালিকায় প্রতিষ্ঠানটির নাম রয়েছে এক নম্বরে। যাতে বলা হয়েছে, মেঘনা ও ফুলদী নদীর আংশিক দখল করেছে থ্রি অ্যাঙ্গেল।
পরিবেশবিদ ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নৌ চলাচল ও পানি ব্যবস্থাপনার জন্য দেশের অন্যতম প্রধান নদী মেঘনা। এ নদীর প্রবাহ কৃত্রিমভাবে বাধাগ্রস্ত করা হলে তার প্রভাব পড়বে গোটা মেঘনা অববাহিকায়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেঘনা ও এর শাখা ফুলদী নদী এবং সংলগ্ন খাল দুটি উদ্ধারে সর্বশক্তি নিয়োগের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
গত ২২ জুন মুন্সীগঞ্জের ডিসি হিসেবে যোগ দিয়েছেন কাজী নাহিদ রসুল। তার যোগদানের আগেই উচ্চ আদালতের জারি করা রুলের জবাব দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে। থ্রি অ্যাঙ্গেলের দখলকান্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে গতকাল মঙ্গলবার টেলিফোনে কাজী নাহিদ রসুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনাকালে যে সাতটি জেলাকে কঠোর লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে মুন্সীগঞ্জ তার একটি। এখানে দায়িত্ব নিয়ে আসার পরই করোনা নিয়ে বড়রকম ব্যস্ত রয়েছি, সে কারণে এখনো জেলার সব তথ্যের দিকে নজর দিতে পারিনি। এ বিষয়ে দ্রুতই খোঁজ নেব।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০ সালে গজারিয়ার দৌলতপুর এলাকায় ব্যক্তিমালিকানাধীন কয়েক বিঘা জমি কেনে থ্রি অ্যাঙ্গেল। তবে গত দুই বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ সময়ের মধ্যে তারা মেঘনা নদীর পূর্বপাশে অন্তত ৫০০ ফুট জায়গা ভরাট করেছে। এছাড়া এ অংশ থেকে উৎপত্তি হওয়া ফুলদী নদীর দক্ষিণ অংশে নদীর মাঝ বরাবর ভরাট করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
দুই নদী, দুই খাল দখল : খরস্রোতের কারণে মেঘনা নদীর বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। সরেজমিন গত সোমবার থ্রি অ্যাঙ্গেলের প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মেঘনা নদীর তীর থেকে ভেতর পর্যন্ত অন্তত ৫০০ ফুট দখল করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আর ফুলদী নদীর মাঝ বরাবর পর্যন্ত বালু ফেলা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা নূর মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেঘনা নদীর যে অংশ থেকে ফুলদী নদীর উৎপত্তি হয়েছে ঠিক সেখানেই থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন ১৫০ একর জমির ওপর জাহাজ নির্মাণের জন্য মাটি ভরাট করেছে। এ মাটি ভরাটের ফলে মেঘনা নদী যেমন ছোট হয়েছে, তেমনি ফুলদী নদীর অর্ধেকই ভরাট হয়ে গেছে। এতে ফুলদী নদী দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারছে না। অথচ কিছুদিন আগেও এ নদী দিয়ে এখানকার পাঁচটি খাদ্যগুদামে পণ্য যেত কার্গোতে করে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিনের প্রকল্পের ভেতর দুটি খাল ছিল। এ দুই খাল দিয়ে আরও পূর্বাঞ্চলের পানি এসে নদীতে পড়ত। কোম্পানি দুটি খালই ভরাট করেছে। ’
দখল-ভরাটে ফুলদী নদীটি মারা গেলে গজারিয়া উপজেলার বড় একটি অংশজুড়ে বিপর্যয় নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, থ্রি অ্যাঙ্গেলের প্রকল্প এলাকার ভেতরে কুমিরা ও বোরোচক নামে দুটি খাল নদীতে এসে পড়েছিল। প্রায় সারা বছরই এ খালে পানি থাকত। সম্প্রতি এ দুটি খালের পুরোটাই ভরাট করে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি। সরেজমিন গিয়ে সেখানে খালের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। খালের জায়গায় বহুতল ভবন ও একাধিক শেড তৈরি করেছে কোম্পানিটি।
জলাভূমি, নদী-খাল, খাসজমি ও ব্যক্তিগত জমি দখল করে জাহাজ নির্মাণ কারখানা তৈরির প্রেক্ষাপটে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর পক্ষে গত ৮ মার্চ উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করা হয়। পরে ৫ এপ্রিল হাইকোর্টের


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা