April 20, 2024, 4:34 pm

মাটিরাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুর্নীতি, অনিয়ম ও আত্মীয়করনের অভিযোগ

২৭ জুলাই ২০২১,বিন্দুবাংলা টিভি. কম,

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :

আশ্রয়ণের অধিকার – শেখ হাসিনার উপহার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার বাসগৃহ বিতরণে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সারা দেশে ভূমি ও গৃহহীন ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২ পরিবারকে বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। গত বছর বিতরণ কাজ শুরু হয়।

এরই মধ্যে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায় দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রায় ১০৯ উপকারভোগীকে ঘর বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় মাটিরাঙ্গা উপজেলার ১নং তাইন্দং ইউনিয়নে প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় নির্মিত বিভিন্ন ঘরের দেয়ালে ও বারান্দার পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে । টিনের ছাউনিতে দেয়া হয়েছে নিম্নমানের কাঠ। নির্মান কাজ শেষ হতে না হতেই কিছু ঘরের দরজা-জানালার গ্রীলের অংশ খুলে পড়ছে ।

নকশা অনুযায়ী নেই অনেক ঘরের বারান্দা, রান্না ঘর, বাথরুম, সেফটি টাংকি সহ নানা অংশ । ফলে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে অসহায় এ সব পরিবারগুলো নানা রকম ঝুকি নিয়ে কোন রকম বসবাস করছেন এ সব ঘরে । প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং ইউনিয়নে যে কটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলোর চাবি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হলেও সরেজমিনের তার বাস্তবচিত্র ভিন্ন

২০১৮-১৯ সালে বরাদ্ধকৃত প্রথম দফার ঘরগুলোর মধ্যে তাইন্দং মাঝপাড়া ডাঃ জালাল হোসেন এর নামীয় ঘরটি অর্ধনির্মিত অবস্থায় রয়েছে।সরেজমিনে গেলে গণমাধ্যম কর্মীদের তিনি জানান, আমি তাইন্দং ইউপি চেয়ারম্যানের দাবীকৃত ৫০ হাজার টাকা দিতে না পারায় অদ্যবদি বাথরুম, রান্নাঘর, পিছনের প্যাসেজ লম্বা ৮ ফুট পার্শে ৬ ফুট ভিটে পাকাকরণ, রং করণ, মুল ভবনের ২ফুট উচু পাকা ভিটা নির্মান কাজ করে দেয়নি কতৃর্পক্ষ ।ঘর যেটুকু নির্মান হয়েছে তাতে মোঃ হুমায়ুন কবীর চেয়ারম্যানের নির্দেশে শ্রমিকদের খাবার , ঘরের তীর, পাইর বা বুতুর, বাত্তী কিনে দিয়েছেন সুবিধাভোগী এই ব্যক্তি ।

এতে ডাঃ জালালের খরচ হয়েছে আরো প্রায় ৪০ হাজার টাকা । যা দরিদ্র এই ব্যক্তি খরচ করার কথা নয় । এছাড়াও একই ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় দফার বহু ঘর নির্মাণ কাজে হয়েছে অবৈধ আর্থিক লেনদেনসহ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি । অন্যদিকে হুমায়ুন কবীর চেয়ারম্যানের নির্বাচনী কর্মী সুবিধাভোগী হাফিজ মিয়া বলেন, তার নামে আসা বরাদ্দকৃত ঘরের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি । তবে নিজের অর্থ ব্যয় করে ঘর নির্মানের জন্য ১৫ বস্তা সিমেন্ট, ৩ ট্রলি বালু ও ঘরে ব্যবহৃত কাঠের যোগান দিতে হয়েছে তাকে । তারপরও তাঁকে দেওয়া হয়নি টয়লেট । সুবিধাভোগী হুমায়ুন কবিরের পিতা উজ্জ্বল মিয়া জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর আনতে হুমায়ুন চেয়ারম্যানকে দিতে হয়েছে নগদ ৩০ হাজার টাকা ও ঘরের তীর, বুতুর,৬বস্তা সিমেন্ট কিনে দিতে হয়েছে । তারপরও আমার ছেলের নামে বরাদ্দ আসা ঘরের কাজ ২ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ।বিষয়টি হুমায়ুন চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি আজ করবো কাল করবো বলে শুধু কালক্ষেপন করে চলেছেন ।

এ সময় একই ওয়ার্ডের মুসলিম উদ্দিন পিতা জয়নাল আবেদিন নামের একব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, ঘর চাওয়ায় তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবী করেন চেয়ারম্যান হুমাযুন কবীর । টাকা দিতে না পারায় ঘর পাননি তার ভগ্নিপতি । একই ওয়ার্ডে ঘর বরাদ্ধ দেয়ার আশ্বাসে খোরশেদা বেগম স্বামী মফিজুল ইসলামের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন এলাকার সেলিম সর্দারের মাধ্যমে চেয়ারম্যান হুমাযুন কবীর । সুবিধাভোগী সোলেমান হোসেনের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম জানান, ঘর বরাদ্ধ পেতে হুমায়ুন চেয়ারম্যানকে দিতে হয়েছে ২৫ হাজার টাকা , ঘর নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের ইট, সিমেন্ট ও বালু, পিলারে অবস্থা অত্যান্ত ঝুকিপুর্ণ।

হাল্কা ধাক্কা দিলেই পিলার হেলে পরার আশংঙ্কা রয়েছে । ভিটেও মাটির নিচে চাপা পরে আছে । চলমান কাজে কিনে দিতে হয়েছে তীর, বুতুর সহ ঘরে ব্যবহৃত কাঠ । এছাড়াও বিভিন্ন ঘরে টয়লেট রান্না ঘরসহ নিম্নমানের কাজ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সুবিধাভোগীরা ।

খোদ হুমায়ুন চেয়ারম্যানের মায়ের নামেও দেয়া হয়েছে ঘর বরাদ্ধ এবং তাইন্দং ইউনিয়নের জন্য বরাদ্ধকৃত ঘর কৌশলে তবলছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা ও চেয়ারম্যানের ড্রাইভার মোঃ মোজাম্মেল হক মুছাকে দেয়া হয়েছে।

মা ও নিজের মোটরসাইকেল চালকসহ হুমায়ুন চেয়ারম্যান তার মামা এবং মামাতো ভাইকে দুটি ঘরের বরাদ্ধ দিয়েছেন একই পরিবারে।

এ বিষয়ে তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরের সাথে কথা বলতে গেলে ক্যামেরার সামনে তিনি কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। পরে মুঠোফোনে সাংবাদিকদের এই বিষয়ে বারাবাড়ি না করতে হুমকি প্রদান করেন । এ সময় তিনি প্রতিবেদন প্রকাশ না করতে বলেন ।

বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজকুমার শীল , অফিস খরচের নাম ভাঙ্গিয়ে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে তিনি অবগত নন দাবী করে বলেন যদিও এমন কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অর্থ লেনদেনের সাথে জড়িতরাই দ্বায়ভার গ্রহণ করবে। চেয়ারম্যানের আত্মীয় স্বজনের নামে ঘর বরাদ্দ দেয়ার বিষয়টি জানেন না উল্লেখ করে বলেন, ঘর নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে কোন অভিযোগ পাননি তিনি, তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ হেদায়েতুল্লাহ বলেন, আমি মাটিরাঙ্গা উপজেলায় যোগদান করেছি সবেমাত্র । বিষয়টি খতিয়ে না দেখে আমার মন্তব্য করতে পারি না ।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর মাটিরাঙ্গা উপজেলাতেও আসছে, কিন্তু কোন ইউনিয়নে কতগুলো ঘর এসেছে এই বিষয়ে আমাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অথবা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কিছুই জানায়নি।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা