March 28, 2024, 3:19 pm

ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে একাধিক বিয়ে, প্রতারক গ্রেপ্তার

০৯ জুলাই ২০২১, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

বাগেরহাটে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে একাধিক বিয়ে এবং টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মারুফ শেখ (৪০) নামে এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রতারণার শিকার শরণখোলা উপজেলার জেসমিন আক্তার নামে এক নারীর মামলায় বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) রাতে খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার দামুদার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তার মারুফ বাগেরহাট সদর উপজেলার শ্রীঘাট এলাকার রমজান আরী শেখের ছেলে। তিনি বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) এ সৈনিক পদে কর্মরত ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি চাকরিচ্যুত হন।

দুপুরে বাগেরহাটের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সহকারী পুলিশ সুপার সোনিয়া পারভীন বলেন, শরণখোলা উপজেলার তাফালবাড়ি এলাকার সুলতান জোয়াদ্দারের মেয়ে জেসমিন আক্তার ১৫ জুন মারুফ শেখের বিরুদ্ধে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে বিয়ে এবং পরবর্তীতে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়ায় আমরা মারুফকে গ্রেফতার করেছি।

তিনি বলেন, মামলার তদন্ত ও বিভিন্ন লোকের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা মারুফের পাঁচটি বিয়ের সত্যতা পেয়েছি। মারুফ ২০০৪ সালে খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার দামুদার এলাকার সালাম সরদারের মেয়ে নুপুরকে বিয়ে করেন। ২০১৮ সালে শরণখোলা উপজেলার তাফালবাড়ি এলাকার সোবহানের মেয়ে সালমা বেগমকে, ২০১৯ সালে একই উপজেলার সোনাতলা এলাকার মনা মল্লিকের মেয়ে বৃষ্টি আক্তারকে এবং ২০২০ সালে শরণখোলা এলাকার কবির হাওলাদারের মেয়ে কারিমা বেগমকে বিয়ে করেন। সর্বশেষ মামলার বাদী জেসমিনকে বিয়ে করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে।

প্রত্যেক শ্বশুরবাড়ি থেকে মারুফ ক্রমান্বয়ে ৫, ৮, ৯, ১৩ ও ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আমাদের কাছে এসব অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা মারুফ শেখকে আদালতে সোপর্দ করেছি। মারুফের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা চলছে।

এদিকে প্রতারক মারুফ শেখের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে প্রতারণার শিকার অন্তত পাঁচটি পরিবারের ২০ থেকে ২৫ জন নারী-পুরুষ থানার সামনে উপস্থিত হন। শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমানকে মারুফের প্রতারণার বিষয়টি অবহিত করেন। প্রতারণার মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি জানান।

শরণখোলা উপজেলার বকুলতলা গ্রামের নাসির উদ্দিন বলেন, কখনো সেনাবাহিনীর মেজর, কখনো গোয়েন্দা কর্মকর্তা, কখনো র‌্যাবের কর্মকর্তা অথবা নিজেকে ক্ষমতাশীল ব্যক্তি হিসেবে প্রকাশ করে বিয়ে করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ছিল মারুফ শেখের কাজ। শুধু জেসমিন নয়, অনেক মেয়ের জীবন এভাবে নষ্ট করেছে মারুফ শেখ।

মামলার বাদী প্রতারণার শিকার জেসমিন বেগম বলেন, স্থানীয় ঘটক আইয়ুব আলী হাওলাদারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে বাবার সম্মতিতে বাগেরহাটের একটি কাজী অফিসে বসে তিন লাখ টাকা কাবিনে মারুফ শেখ আমাকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে নানা অজুহাতে আমাদের কাছ থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেয়। একপর্যায়ে আমি জানতে পারি সে আরো অনেক নারীর সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণা করেছেন। অনেক চেষ্টা করে তার মূল ঠিকানা বের করে শরণখোলা থানায় মামলা দায়ের করি। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করায় আমি খুবই খুশি। মারুফের কঠোর বিচারের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়া টাকা ফেরত চান এই নারী।

জেসমিনের বাবা সুলতান জোয়াদ্দার বলেন, ঘটক আইয়ুব আলী হাওলাদারের মিস্টি কথা এবং মারুফের দেওয়া মৌখিক পরিচয়ে খুশি হয়ে মেয়ে বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে যে এত বড় প্রতারক তা আমরা বুঝতে পারিনি। এলাকায় আরও যে বিয়েগুলো মারুফ করেছেন তাও ঘটক আবুলের সহায়তায় করেছেন বলেও দাবি করেন সুলতান জোয়াদ্দার। প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়া টাকার ভাগ পেতেন ঘটক আইয়ুব আলী হাওলাদার এমন অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের বাসিন্দা ঘটক আইয়ুব আলী হাওলাদারকে ফোন দিলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা