March 29, 2024, 3:21 pm

ডিপিডিসির তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহবুবের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ

২২ জুলাই ২০২১,বিন্দুবাংলা টিভি. কম, স্টাফ রিপোর্টার :

দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ বিতরনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ডিপিডিসি বিগত বছরগুলোতে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভুতুড়ে বিল সহ নানা কারণে আলোচনা সমালোচনার বিতর্ক জন্ম দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আর এসবের সঙ্গে জড়িত থাকা সহ রাষ্ট্রের সাথে ভয়াবহ প্রতারণা অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির খোদ তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে। দৈনিক অন্যদিগন্ত জানায়

ডিপিডিসির এসি (তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবের দুর্নীতি ও লুটপাটের বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে। ডিপিডিসির বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান প্রতিষ্ঠানটির প্রকিউরমেন্ট বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের ক্রয়সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় তিনিই দেখভাল করেন।

একাধিক মেয়াদে দীর্ঘদিন ধরে একই পদে থাকার কারনে তিনি দুর্নীতির শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। আর এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি টেন্ডারবাণিজ্যসহ তার সমস্ত অপকর্ম পরিচালনা করেন। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি: ডিপিডিসিতে এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৯ জন তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রকিউরমেন্ট) দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে মাহবুবুর রহমানই দ্বিতীয়বারের মতো একই দায়িত্বে ফেরত এসেছেন। এই ঘটনার পেছনে কাজ করেছে তার কারিশমাটিক ম্যানেজ কৌশল। শুধু তাই নয়, দুই মেয়াদ মিলিয়ে তিনিই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে এ পদে রয়েছেন।

এক্ষেত্রে আশ্চর্যের বিষয় হলো মাহবুবুর রহমান ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত টানা তিন বছর দায়িত্ব্ব পালন করেন। এরপর এই পদে দুজনের নিয়েগ হয়। কিন্তু দুজন মিলেও এক বছর দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। দায়িত্ব্ব ছাড়ার মাত্র এক বছরের মাথায় দুজনকে বদলি করে মাহবুব তার কৌশলী ম্যানেজ পাওয়ারের মাধ্যমে আবারো একই পদে যোগদান করেন ২৭ ফেব্রয়ারি ২০২০ এ। কেমন অদৃশ্য খুঁটির জোরে তিনি এমনটা করতে পেরেছেন সেটি কিন্তু সহজেই অনুমেয়। এর মধ্যে এক বছর কিন্তু তিনি দেশেও ছিলেন না। এই মাহবুবুর রহমান দ্বৈত দেশের নাগরিক। তিনি বাংলাদেশের পাশাপাশি কানাডারও নাগরিক। দ্বৈত নাগরিক হয়ে এমন পদে থাকা বাংলাদেশের সাংবিধানিক আইন পরিপন্থী। ২০১৯ সালের প্রায় পুরোটাই তিনি কানাডায় ভোগ বিলাসী জীবনে মত্ত ছিলেন। এরপর আবার নিজের পছন্দ মতো আগের পদে ফিরে এসে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। শুধু মাহবুবুর রহমান নয় তার পরিবারের প্রতিটি সদস্যও কানাডার নাগরিক। তার কানাডার পাসপোর্ট নম্বর অএ ০৬২২০৮ । তার পরিবারের সদস্যরা কানাডায় বসবাস করেন বিলাসবহুল বাড়িতে। ছেলে মেয়েরা লেখা পড়া করেন কানাডার নামি দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে তিনি চুক্তি ও ক্রয় সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছেন। মাহবুবুর রহমান নিজের মনোনীত ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার জন্য ঠিকাদারের সাথে আলোচনা করে দরপত্রে শর্ত প্রদান করেন। দরপত্র মূল্যায়নে অন্যান্য দরপত্র অযোগ্য করে নিজের মনোনীত ঠিকাদারকে যোগ্য মূল্যায়ন করে কাজ পাইয়ে দেন। চুক্তি ও ক্রয় সার্কেলের ২টি পদে (তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রধান প্রকৌশলী) তিনি দায়িত্ব্বে থাকায় তার দুর্নীতি করতে সহজ হয়। এসব বিষয় জানতে তার বক্তব্য জানতে তিনি ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন বিভিন্ন প্রলোভন দেখান।

ডিপিডিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে চাকরি থেকে বরখাস্তে আইনি নোটিশ
বিদেশের নাগরিক হওয়ায় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমানকে চাকরি থেকে বরখাস্তে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশপ্রাপ্তির তিনদিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। জ্বালানি সচিব, ডিপিডিসির চেয়ারম্যান, এমডিসহ আটজনকে ডাকযোগে মেইলে এই নোটিশ পাঠানো হয়।

নোটিশে বলা হয়েছে, মাহবুবুর রহমান বর্তমানে ডিপিডিসির তত্ত্বাবধায়ক ইঞ্জিনিয়ার এবং চুক্তি ও ক্রয়-সংক্রান্ত সার্কেলে দায়িত্ব পালন করছেন। চাকরিতে থাকাবস্থায় তিনি কানাডার নাগরিকত্ব অর্জন করেন। ডিপিডিসি সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং মাহবুবুর রহমান একজন সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় কোনোভাবেই অন্য কোন দেশের নাগরিকত্ব অর্জনের সুযোগ নাই।

সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪০ ধারা অনুযায়ী অন্য কোন দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করার সাথে সাথেই যেকোনো সরকারি চাকরিজীবীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার কথা। কিন্তু মাহবুবুর রহমান দীর্ঘদিন যাবত কানাডার নাগরিকত্ব গ্রহণ করার পরেও সরকারি চাকরিতে বহাল রয়েছেন যাহা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, যেহেতু মাহবুবুর একজন সরকারি চাকরিজীবী এবং কানাডার নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন সেহেতু সরকারি চাকরিতে তার থাকার কোন অধিকার নেই। আইন অনুযায়ী অবশ্যই তাকে বরখাস্ত করতে হবে।

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানার অধিবাসী আজরাফ বিন আকরামের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউছার এই নোটিশ পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ফোন ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা