April 25, 2024, 1:25 am

চাকরি গেলো ত্ব-হার সেই বন্ধুর

২০ জুন ২০২১, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

আলোচিত ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের বন্ধু সিয়াম ইবনে শরীফ চাকরিচ্যুত হয়েছেন। ত্ব-হা তার দুই সঙ্গী ও গাড়িচালককে নিয়ে বন্ধু সিয়ামের গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার ত্রিমোহনীতে আট দিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন বলে দাবি করছে পুলিশ।

এ ঘটনার জের ধরেই সিয়ামকে চাকরিচ্যুত করেছে মোবাইল ফোন কোম্পানি অপো। সিয়াম রংপুরে অপোর মানবসম্পদ (এইচআর) বিভাগে কর্মরত ছিলেন।

রোববার (২০ জুন) দুপুর পৌনে ২টার দিকে মুঠোফোনে নিজের চাকরি হারানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিয়াম ইবনে শরীফ। ত্ব-হা ইস্যুতে শনিবার (১৯ জুন) তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

সিয়াম বলেন, আমার বন্ধু আবু ত্ব-হাসহ চারজন গাইবান্ধায় আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল, এটা আমাকে জানানো হয়নি। এ কারণে ত্ব-হার নিখোঁজ হওয়ার সংবাদে আমি নিজেও উদ্বিগ্ন ছিলাম। অন্য বন্ধু-বান্ধবদের মতো ত্ব-হার সন্ধান ও উদ্ধারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলাম।

তিনি আরো বলেন, পুলিশ ত্ব-হাকে উদ্ধারের পর জানলাম, সে আত্মগোপনে ছিলো। এবং সেটা নাকি আমাদের বাড়িতেই। আমার মা ত্ব-হাদের সেখানে লুকিয়ে থাকার ব্যাপারে আমাকে একটি বারও কিছু জানায়নি। অথচ এখন অভিযোগ করা হচ্ছে, আমি নাকি তাদেরকে লুকিয়ে রেখে মানববন্ধন করেছি। এটা মিথ্যা অভিযোগ, আমি কিছুই জানতান না।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে চাকরি হারানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে সিয়াম বলেন, আমার কোনো অপরাধ নেই। অথচ ত্ব-হা আমার বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা এবং আমি তার (ত্ব-হার) সন্ধান চেয়ে মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিলাম বলেই চাকরিটা হারালাম। আল্লাহ বিচার করবে, আমি সত্যি কিছু জানতাম না।

আপনার মা কেন ত্ব-হাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি আপনাকে জানাল না? এমন প্রশ্নের জবাবে সিয়াম বলেন, ত্ব-হা তো প্রায়ই আমাদের বাড়িতে যেত। ও তো আমার স্কুল এবং কলেজ ফ্রেন্ড। আমাদের একসঙ্গে বেড়ে উঠার অনেক স্মৃতি। খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আমাদের। ত্ব-হা তার স্ত্রীকে নিয়েও আমাদের গ্রামে যেত। আর এবার নাকি সে (ত্ব-হা) আমার মাকে অনুরোধ করেছিল, তাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য। পুলিশ ত্ব-হাকে উদ্ধারের পরই এটা জানতে পেরেছি।

এসময় তিনি বলেন, আমার কষ্ট হচ্ছে। আমি মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বিভিন্নজন আমাকে ভুল বুঝছে। অনেক মিডিয়া আমাকে নিয়ে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে। এতে আমার মানসম্মানের ক্ষতি হচ্ছে। ত্ব-হার এভাবে আশ্রয় নেওয়া বা আত্মগোপনে যাওয়ার ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। আসলে কী ঘটেছে, তা সবার কাছে স্পষ্ট হওয়া দরকার।

তবে সিয়ামের মা নিশাদ নাহার বলেন, ত্ব-হা ও তার সঙ্গীরা সাত দিন এই বাড়িতে থাকলেও আশপাশের কেউ জানত না। এমনকি তার ছেলে সিয়ামও বিষয়টি জানতেন না বলেও দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, ত্ব-হা এখানে এসে বলল, আমাকে দুজন লোক ফলো করছে, আমরা এখানে কিছু দিন থাকব। আমার ছেলের সঙ্গে পরিচয়ের কারণ হলো তারা রংপুরে এসএসসি পর্যন্ত একসঙ্গে পড়েছে। তারপর দুজন দুই কলেজে পড়ত। কিন্তু একসঙ্গে চলাফেরা করত। তারপর ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন দুজন একসঙ্গে চলত।

সিয়ামের মা নিশাদ নাহার বলেন, এদিকে আমরা গাইবান্ধায় চলে আসি। এখানে আসার পর আমার ছেলের চাকরি হয়। চাকরি সূত্রে সে রংপুরে থাকে। আর ত্ব-হা আমার বাসায় এর আগে অনেকবার এসেছে।

চারদিকে তাদের নিয়ে তোলপাড়, তারপরও আপনারা কেন জানাননি, এমন প্রশ্নে নিশাদ নাহার বলেন, আসলে এটা আমি ঠিকভাবে জানতে পারিনি কারণ আমার বাসার টিভিটা নষ্ট। আর আত্মীয়স্বজনরা আমাকে ফোনে বলেছে, ও তো (ত্ব-হা) নিখোঁজ। তারাও বলেছে, না জানাতে। আমার ছেলেকেও বলা নিষেধ ছিল। কিন্তু পরে আমি ত্ব-হাকে বলেছি, যেহেতু মিডিয়ায় তোমাদের নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে, তোমরা কিন্তু এবার যেতে পার। তারপর তারা চলে গেছে।

একই দাবি করেছেন রংপুর মহানগর পুলিশের ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপকমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন। তিনি জানিয়েছে, গত ১০ জুন রংপুর থেকে ঢাকার পথে রওনা হন আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানসহ আব্দুল মুহিত আনসারী, ফিরোজ আলম ও গাড়িচালক আমির উদ্দিন ফয়েজ। ঢাকার গাবতলী পৌঁছালে ত্ব-হার ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে সেখান থেকে আবার গাইবান্ধার ত্রিমোহনীতে চলে যান তারা। সেখানে পূর্বপরিচিত বন্ধু সিয়ামের বাড়িতে অবস্থান করেন। এ সময় বন্ধু সিয়াম বাসায় ছিলেন না।

পুলিশের দাবি, আবু ত্ব-হা ও তার সঙ্গীরা নিখোঁজ হননি, তারা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন। এর নেপথ্যে আবু ত্ব-হার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কিছু কারণ রয়েছে। যা তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করতে চাইছে না পুলিশ।

এর আগে শুক্রবার (১৮ জুন) দুপুরে ত্ব-হা রংপুরের প্রথম স্ত্রীর বাবার বাড়িতে উপস্থিত হন বলে জানান কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ। পরে কোতোয়ালি থানা থেকে রংপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

ওইদিন রাত সোয়া ৯টার দিকে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয় থেকে তাদের মহানগর আমলি আদালতে (কোতোয়ালি) নেওয়া হয়। এরপর মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক কেএম হাফিজুর রহমানের কাছে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেন আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ, তার সঙ্গী আব্দুল মুহিত ও গাড়িচালক আমির উদ্দিন।

কোর্ট ইন্সপেক্টর নাজমুল ইসলাম জানান, আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানসহ তিনজনকে রাত সোয়া ৯টার দিকে ডিবি কার্যালয় থেকে আদালতে আনা হয়। সেখানে মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল আদালতে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেন। পরে আদালত ‘স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে’ যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের পরিবারের কাছে নিজ নিজ জিম্মায় ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

প্রসঙ্গত, ১০ জুন রংপুরে থেকে ঢাকার বাসায় ফেরার পথে আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানসহ চারজন নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ ছিল। আবু ত্ব-হার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, ঢাকার গাবতলী থেকে তারা নিখোঁজ হন। আবু ত্ব-হার সঙ্গে নিখোঁজ হয়েছিলেন আরো তিনজন। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।

এ নিয়ে আবু ত্ব-হার মা আজেদা বেগম রংপুর মহানগর কোতোয়ালি থানায় এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার সারা ঢাকার পল্লবী থানায় পৃথক সাধারণ ডায়েরি করেন। এছাড়াও গাড়িচালক আমির উদ্দিন ফয়েজের ভাই ফয়সাল রংপুরে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সূত্র: ঢাকা পোস্ট


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা