April 19, 2024, 8:21 am

ভিক্ষুক হয়েও মসজিদে ১৩ হাজার টাকা অনুদান জবেদার

০৫ জানুয়ারী ২০২১, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

বিধবা মেয়ে ও এক নাতনীকে নিয়ে কষ্টের সংসার বৃদ্ধা জবেদা বেগমের। ভিক্ষা করে পেট চলে তার। ভিক্ষাবৃত্তি সমাজের চোখে সম্মানহীন হলেও জবেদার বেলায় সেটি ভিন্ন হয়ে উঠেছে। মর্যাদাহীন এই বৃদ্ধা সমাজের চোখে হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণার উৎস।

ভিক্ষার টাকা জমিয়ে পাড়ার মসজিদে তিনি অনুদান দিয়েছেন ১৩ হাজার টাকা। সেই থেকে গ্রামে আলোচিত তিনি। প্রমাণ করেছেন, দান করতে বিত্তশালী হওয়া লাগে না, লাগে সুন্দর একটি মন। জবেদা বেগম যশোরের মণিরামপুর উপজেলার বাগডাঙা গ্রামের মৃত চিনেতুল্লা বিশ্বাসের স্ত্রী। ২৫ বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান চিনেতুল্লা। বেঁচে থাকতে তিনিও ভিক্ষা করতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমে পড়েন জবেদা।

বৃদ্ধার পাঁচ মেয়ে, ছেলে নেই। সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কপালের ফেরে তার চতুর্থ নম্বর মেয়ে শাহানারা খাতুন স্বামী পরিত্যাক্তা হন। নবম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে আফরোজা খাতুনকে নিয়ে আছেন বাপের ভিটেয়। মায়ের সংসারে থেকে জুটমিলে কাজ করেন শাহানারা।

বয়সেরভারে নুইয়ে পড়েছেন জবেদা বেগম (৮০)। এখন আর পাড়া ঘুরতে পারেন না। সপ্তাহে আশপাশের হাটগুলোতে ভিক্ষা করেন। যা পান তা থেকে কোনরকম পেট চালিয়ে বাকিটা জমিয়ে রাখেন। জমানো টাকা নিজের জন্য খরচ না করে দান করেন মসজিদ, মাদরাসা ও ইসলামি জলসায়।

জবেদা বেগম পূর্বপশ্চিমকে বলেন, কয়মাস আগে পাড়ার বাগডাঙা মসজিদে ১০ হাজার, বাগডাঙা বাজার মসজিদে এক হাজার, দহকুলা মসজিদে এক হাজার, মাছনা মাদরাসায় এক হাজার ও পাড়ার ঈদগাহ মাঠের সভায় ৫০০ টাকা দিছি। কোন কিছু পাওয়ার আশায় না, মন চাইছে তাই দান করিছি। আমারে আল্লাহ দেবে।

জবেদা বেগমের দানের বিষয়টি আনেকদিন গোপন ছিল। সম্প্রতি ‘প্রিয় বাগডাঙা’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে বৃদ্ধার ছবিসহ তার দানের বিষয়ে একটি পোষ্ট দেওয়া হয়। তখন ঘটনাটি জানাজানি হলে আলোচনায় আসেন বৃদ্ধা।

স্বামীর রেখে যাওয়া পাঁচ শতক ভিটের উপরে মাটির ঘরে বসবাস জবেদার। বিধবা ভাতাছাড়া সরকারি কোন সুবিধা পান না তিনি।

জবেদার স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে শাহানারার নামে ১০ টাকার একটি চালের কার্ড ছিল। একবার চাল তোলার পর স্থানীয় মহিলা মেম্বর লতিফা বেগম নামটি কেটে দিয়েছেন।

স্থানীয় আব্দুর জব্বার জানান, মসজিদ পাকা করার জন্য আমরা যখন গ্রামভিত্তিক টাকা তুলছিলাম তখন ভিক্ষুক জবেদা সহযোগীতার হাত বাড়ান। তিনি নিজে এসে বাগডাঙা মসজিদে ১০ হাজার ও দহকুলা মসজিদে এক হাজার টাকা দিয়ে যান। তা দেখে আমরা উৎসাহিত হই। দ্রুত মসজিদ সংস্কারের কাজ এগিয়ে যায়।

স্থানীয়রা বলছেন, করোনাকালীন এক ভিক্ষুক টাকা সহযোগিতা করে সরকারি ঘর পেয়েছেন। আমরা চাই ভিক্ষুক জবেদাও যেন সরকারি সহায়তা পায়। তাকে যেন শেষ বয়সে আর ভিক্ষা করতে না হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ বলেন, জবেদা সরকারি ঘর পাওয়ার যোগ্য। আমরা চাই সে যেন সরকারি ঘর পায়।

স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য লতিফা বেগম পূর্বপশ্চিমকে বলেন, ভিক্ষা করে আত্মারে কিছু দেয় না জবেদা। টাকা জমিয়ে বিভিন্ন মসজিদ মাদরাসায় দান করেন। তার মেয়ের নামে ১০ টাকার চালের কার্ড ছিল। পরে ৪০ দিনের কাজে ওর নাম দেওয়ায় চালের কার্ড বাতিল করা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা