April 20, 2024, 6:41 am

প্রেসক্লাব ভবন নির্মাণে ফিল্মি স্টাইলে বদির বাধা

২৩ নভেম্বর ২০২০, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, কক্সবাজার প্রতিনিধি:

নানা অপকর্মের ফলে দেশজুড়ে প্রায়ই আলোচনায় থাকেন আবদুর রহমান বদি।

রোববার (২২ নভেম্বর) দুপুরে টেকনাফ পৌরসভার কার্যালয় সংলগ্ন এলাকায় স্ত্রী এমপি শাহিনা চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে টেকনাফ প্রেসক্লাবের ভবন নির্মাণ কাজে ফিল্মি স্টাইলে বাধা দিয়ে আবারও আলোচনায় এসছেন বদি।

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, ১৯৯৬ সালে আবেদনের প্রেক্ষিতে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন রেজুলেশনের মাধ্যমে থানার সামনে ইদগাহ মাঠ সংলগ্ন একটি পুরনো ভবন টেকনাফ প্রেসক্লাবের নামে হস্তান্তর করে। বছর পাঁচেক আগে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সেটি ভেঙে দাতা সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সহযোগিতায় নতুন সেমি পাকা ভবনের নির্মাধ কাজ চলছে। যা এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে।

অভিযোগ উঠেছে, প্রেসক্লাব ভবন নির্মাণে তদারকিকারি এনজিও ফোরামের প্রকৌশলী মো. নাঈমকে পিটিয়ে ও শ্রমিকদের তাড়িয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন বিতর্কিত সাবেক এ সাংসদ।প্রশাসনিক তদারকিতে এক নম্বর খাস খতিয়ানের জমিতে চলমান নির্মাণ কাজটি কোনো কারণ ছাড়াই রোববার হঠাৎ বন্ধ করে দেন সাবেক এমপি বদি।

জানা গেছে, ওইদিন নির্মাণাধীন প্রেসক্লাব ভবন এলাকায় আসেন বদি। গাড়িতে বসা অবস্থায় নির্মাণ কাজ তদারকিতে থাকা এনজিও ফোরামের ইঞ্জিনিয়ার নাঈমকে ডেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং মারধর শুরু করেন। কাজ বন্ধ করে স্থাপনা সরিয়ে নিতে হুমকিও দেন তিনি (বদি)।

প্রকৌশলী মো. নাঈম বলেন, নির্মাণের কাজ চলাকালীন হঠাৎ নির্মাণাধীন প্রেসক্লাবের ভবনের সামনে একটা গাড়ি এসে থামে। গাড়ির ভেতর থেকে আমাকে ডাকা হয়। গাড়ির পাশে যেতেই গাড়ির ভেতরে বসে থাকা সাবেক এমপি বদি আমার শার্টের কলার চেপে ধরেন এবং প্রেসক্লাবের ভবন নির্মাণের অনুমতি কে দিয়েছে বলে পর পর দুই তিনটি ঘুষি মারেন। মারধরের পর ‘তুই এখানে থাক আমি আবার আসতেছি’ বলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন বদি।

সাংবাদিকরা জানান, প্রকৌশলী নাঈমকে মারধরের পর পুনরায় প্রেসক্লাব ভবনে আসেন বদি। এবার গাড়ি থেকে নেমেই প্রেসক্লাবের নির্মাণাধীন ভবনের ব্যানারটি টেনে ছিঁড়ে ফেলে দেন। এ সময় পৌর কর্তৃপক্ষকে প্রেসক্লাবের নির্মাণাধীন ভবন ভেঙে ফেলতে উৎসাহিত করেন এবং কিভাবে ভবন নির্মাণ হয় তা দেখে নেয়ার হুমকিও দেন তিনি।

এদিকে এ ঘটনা প্রচার পাওয়ার পর সাংবাদিক সমাজ ফুঁসে উঠেছে। সাবেক এমপি বদির এ ধরনের কাণ্ড মেনে নেয়া হবে না উল্লেখ করে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান টেকনাফ প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ্ব মো. ছৈয়দ হোছাইন, সাবেক সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, সাবেক সহ-সভাপতি মো. আশেক উল্লাহ ফারুকী, সাবেক সভাপতি কায়ছার হামিদ, সাবেক সহ-সভাপতি মো. তাহের নাঈম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক নুরুল করিম রাসেল প্রমুখ।

ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কক্সবাজার রিপোর্টার্স ইউনিটি। এক বিবৃতিতে সভাপতি রাসেল চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সায়ীদ আলমগীর বলেন, জমির মালিকানা নিয়ে কোনো মতবিরোধ থাকলে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা যেত। কারণ উপজেলা প্রশাসনই জমিটি বরাদ্দ দিয়েছে এবং বর্তমানে ভবন নির্মাণ কাজও তাদের সুপারিশে হচ্ছে। তাই নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় না হেঁটে সন্ত্রাসী স্টাইলে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রকৌশলীকে প্রহার ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা কোনোমতেই সমীচীন হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিক বার কল করা হয়। রিং হলেও তিনি ফোন না ধরায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, প্রেসক্লাবের ভবন নির্মাণে বাধা ও ইঞ্জিনিয়ারকে প্রহার করার বিষয়টি আমিও শুনেছি। তবে এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন ওসি।

প্রসঙ্গত এমপি থাকাকালীন ২০১১ সালে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুর রহমানকে টেকনাফ পৌর নির্বাচনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনের সময় শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন বদি। একইভাবে ২০১৫ সালে উখিয়া উপজেলা প্রশাসনের মাসিক উন্নয়ন সভা চলাকালে উখিয়া উপজেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মোস্তফা মিনহাজকে মারধর করেন। এছাড়াও স্কুল শিক্ষক, ব্যাংকারসহ অনেকেই সাবেক এমপি বদির হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। সে সময় এসব বিষয় নিয়ে দেশব্যাপী নানাভাবে সমালোচিত হন তিনি। ইয়াবা গডফাদার হিসেবে সমালোচিত হওয়ার পর নমিনেশন হারিয়ে আড়ালে আবডালে চলে গেলেও প্রেসক্লাবের ভবন নির্মাণ কাজে বাধা দিয়ে আবার আলোচনায় উঠে এলেন বদি।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা