March 29, 2024, 11:32 am

গোপালগঞ্জের বিল রঙিন হয়ে আছে লাল শাপলায়

১১ নভেম্বর ২০২০, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

শীতের শিশিরে ভেজা লাল শাপলা ভোরের সূর্যের সোনালী আভায় দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে মানুষের। গোপালগঞ্জের বিলগুলোতে এখন লাল শাপলার ছড়াছড়ি। বিলের যেদিকেই চোখ যাবে মনে হবে পাতা রয়েছে কোনো মনোরম লাল গালিচা।

প্রাকৃতিক এ সৌন্দর্য্যকে উপভোগ করতে বিলগুলোতে বেড়াতে আসছেন শিক্ষার্থীসহ নানা দর্শনার্থী। এই সুযোগে লাল শাপলার বিলে দর্শনার্থীদের ঘুরিয়ে ও হরেক রকমের পিঠা বিক্রি করে আয়ের পথ তৈরি করেছেন অনেক পরিবার।

কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি, ছত্রকান্দা ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জোয়ারিয়ার বিল, সদর উপজেলার কাঠি ও ডোমরাশুর বিলসহ অন্তত গোপালগঞ্জের ২৫টি বিল এখন রঙিন হয়ে আছে লাল শাপলায়।

স্থানীয়রা জানান, আগে এসব বিলে সাদা-সবুজ শাপলা হলেও ১৯৮৮ সালের বন্যার পর থেকে লাল শাপলা হতে দেখা যায়। এসব বিল সাধারণত এক ফসলি জমি। বোরো মৌসুমেই শুধুমাত্র ধান চাষ করেন কৃষকেরা। এরপর জমিতে বর্ষার পানি এসে যায়। বিলগুলো বছরের ৬ মাস তলিয়ে থাকায় কোন কাজ থাকে না এলাকাবাসীর। সেখানেই প্রতিবছর প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় লাল শাপলা। চারদিক লালে লালে একাকার হয়ে যায়।

দেখা যায়, এ অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রতিদিন ভোর থেকেই বিলগুলোতে ছুটে আসছেন নানা বয়সের দর্শনার্থী। নৌকায় করে ঘুরে ঘুরে সৌন্দর্য্য উপভোগ করছেন তারা। অনেকেই প্রিয় মূহূর্তগুলোকে বন্দি করছেন ক্যামেরা বা মোবাইল ফোনে। অনেকের কাছেই এমন দৃশ্য এক অভূতপূর্ব। এ সৌন্দর্য্য আগত পর্যটকদের ভরিয়ে দিচ্ছে মন ও প্রাণ।

এই সুযোগে বিলে বিলে নৌকা চালানোর আয়ে স্থানীয় অনেকেরই সংসার চলছে। সামান্য কিছু টাকা পেলেই খুশি তারা। হাসিমুখে নৌকায় চড়িয়ে ঘুরিয়ে আনছেন বিল। আবার শাপলা তুলে বিক্রি করেও আয় হচ্ছে অনেকের।

এদিকে, দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে কোটালীপাড়ার কান্দির বিলে মৌসুমী পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে ‘শাপলালয়’। কান্দি ইউনিয়নভূক্ত শেখ হাসিনা আদর্শ মহাবিদ্যালয় সংলগ্ন লাল শাপলা বিলের মধ্যে দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বিল ঘুরে দেখার জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে নৌকার। এছাড়া দর্শনার্থীদের চাহিদা মাফিক বিভিন্ন ধরনের গ্রাম্য পিঠার আয়োজনও রয়েছে এখানে। আর এতে অন্তত অর্ধশতাধিক পরিবারের জন্য সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান।

বিলে বেড়াতে আসা পর্যটক আশরাফুল আলম, শাহানাজ পারভীন, মশিউর রহমান জানালেন,  শাপলার বিলের অপরূপ সৌন্দর্য্য দেখে তারা বিমোহিত। এতে কিছু সময়ের জন্য তারা প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলেন। এ দৃশ্য উপভোগ করতে আসা উচিত ভ্রমণ পিপাসুদের।

কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উত্তম কুমার বাড়ৈ জানান, কান্দি ইউনিয়নের সর্বত্রই লাল শাপলায় ভরে রয়েছে। কান্দি ইউনিয়নের লাল শাপলা বিলকে ‘শাপলালয়’ ঘোষণা করার পর থেকে দর্শনার্থীদের জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে।

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, গোপালগঞ্জে ছোট বড় মিলিয়ে অনেক বিল রয়েছে। এসব বিলে লাল শাপলা ফুটলে এক মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শাপলার বিল দেখতে শুধু গোপালগঞ্জ নয় আশপাশের জেলা থেকেও দর্শনার্থীরা আসছেন। এখানে বাড়তি সুবিধা সৃষ্টি করা হলে পর্যটকদের জন্য সহায়ক হবে। ইতিমধ্যে পর্যটন করপেরেশনের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন সুবিধা তৈরি করা হবে।

টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের সমাধিসৌধ, কোটালীপাড়ায় কবি সুকান্তের বাড়ি ছাড়াও বিলগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া লাল শাপলার সৌন্দর্য্য দেখতে আমন্ত্রণ জানান তিনি। পাশাপশি এসব যেন কোনো প্রকারে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে নজর দেওয়ারও আহবান জানান জেলা প্রশাসক।

 


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা