April 26, 2024, 8:03 am

আইনের তোয়াক্কা না করে বাঁশি ব্যবহার করে অতিথি পাখি শিকার!

১৮ নভেম্বর ২০২০, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, খুলনা প্রতিনিধি:

শীতের শুরুতেই অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠছে খুলনার নয় উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয়। এসব পাখির মধ্যে বালি হাঁস, বক, জলপিপি, কোম্বডাক, সরালী, কাস্তেচাড়া, পাতাড়ি হাঁস, পানকৌড়ি, কাদাখোঁচা, হুরহুর, খয়রা ও সোনা রিজিয়া অন্যতম।

আইনের তোয়াক্কা না করে নগদ অর্থের লোভে অভিনব কৌশলে এসব অতিথি পাখি নিধনে তৎপর হয়ে উঠেছেন শিকারিরা। পাখি ধরতে নতুন কৌশল হিসেবে তারা কাজে লাগাচ্ছে বাঁশির সুর। শিকারের পর আকারভেদে এসব পাখি বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়। আবার এক শ্রেণির মানুষ কোনো কিছু বিবেচনা না করেই এসব পাখি কিনে নিচ্ছেন কেবলই রসনা বিলাসের জন্য।

দীর্ঘদিন ধরে উপকূলীয় খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে শিকারিরা রাতের বেলায় অবাধে পাখি শিকার করে ভোরের আলো ফোটার আগেই তা বিক্রি করছে। এসব শিকারিরা রাতে জলাশয়ের পাশে ফাঁদ পেতে রেখে ধান খেতে বসে পাখির ডাকের সাথে সুর মিলিয়ে বাঁশি বাজায়। এতে বিভ্রান্ত হয়ে অনেক পাখিই সেখানে উড়ে এসে শিকারির ফাঁদে পড়ে আটকে যায়।

পরিযায়ী পাখি শিকারের জন্য পাখির ডাকের সাথে মিলিয়ে বাঁশির সুর তৈরির অভিনব কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দাকোপ উপজেলার সুতারখালী গ্রামের এক শিকারি জানান, তালপাতার সাথে স্কচটেপ জড়িয়ে মোটরসাইকেলের হাইড্রোলিক হর্নের কভারের এক মাথায় সুপারগ্লু লাগিয়ে রাবারের সাহায্যে অভিনব এ বাঁশি তৈরি করা হয়।

এছাড়া, শিকারিরা নাইলনের সুতা দিয়ে তৈরি ছোট-বড় ফাঁদ পাখির চলার পথে পেতে রাখে। রাতে উড়ে বেড়ানোর সময় ওই ফাঁদে আটকা পড়ে অনেক পাখি। আবার চোখে আলো ফেলে, কেঁচো দিয়ে বড়শি পেতে, কোচ মেরে এবং কারেন্ট জাল পেতেও পাখি শিকার করে থাকেন কিছু শিকারি।

পাখি শিকার রোধে স্থানীয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। খুলনা জেলার যেসব অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি পাখি শিকার হয় তার মধ্যে তেরখাদা ও ডুমুরিয়া উপজেলা অন্যতম।

তেরখাদা উপজেলায় দীর্ঘ দিনের জলাবদ্ধ ভুতিয়ার বিল এলাকার নাচুনিয়া, ইন্দুহাটি, পাখিমারা, নৌকাডুবি, আড়কান্দি, আউরোবুন্নি, বাসুখালী বিল এবং ডুমুরিয়া উপজেলার বিল ডাকাতিয়া, মাগুরখালী, শিবনগর, কাঠালিয়া, ঘুরুনিয়া, লাঙ্গলমোড়া, বগারখোর, কুলটি, জালেরডাঙ্গা, ভেল্কামারী, খড়িয়া, পশ্বিম বিলপাবলা, গগনা খাল, বাইসরাণী, রংপুর, মির্জাপুর, শোভনা ও মাগুরাঘোনা এলাকাসহ উপকূলীয় দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিলে শিকারিরা রাতের বেলাই পাখি নিধনে নেমে যায়।

সরেজমিন ডুমুরিয়া ও চালনা বাজারের সুতা ও মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশের দোকানগুলোতে দেখা গেছে, অসাধু শিকারিরা বাঁশি তৈরির জন্য দোকানিদের কাছ থেকে বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনছেন।

বটিয়াঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রবিউল কবির বলেন, ‘অতিথি পাখি নিধনের বিষয়টি জানা নেই। তবে যদি কেউ শিকার করে থাকলে সে ক্ষেত্রে সে অপরাধ করছে।’

দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান জানান, পাখি শিকার করা অপরাধ। এছাড়া রাতের আধাঁরে আমন খেতের ধানও নষ্ট করছেন শিকারিরা।

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সঞ্জীব দাশ বলেন, ‘অতিথি পাখি শিকারের বিষয়ে শোনা যায়, কিন্তু হাতেনাতে শিকারিদের ধরা যায় না। রাতে শিকারিরা পাখি নিধন করে থাকে। সঠিত তথ্য পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা