March 29, 2024, 5:23 am

চৌদ্দগ্রামে করোনা জয় করলেন ডাঃ মোঃ আবুল হাশেম সবুজ

২৩ জুলাই ২০২০, বিন্দুবাংলা টিভি. কম,

রবিউল তালুকদার মিলন,
নিজস্ব প্রতিবেদক :

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। এ পরিস্থিতিতে সাধারন মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন বিভাগের ডাক্তার-নার্স সহ সংশ্লিষ্ট কর্মরত ব্যক্তিগণ। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাক্তার-নার্স সহ অনেক সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। কেউ কেউ এখনো মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। আবার করোনাকে জয় করে পূণরায় কাজে ফিরছেন অনেকে।

অনেকের মতো করোনা জয় করে কাজে ফিরেছেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্মরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডাঃ মো. আবুল হাশেম সবুজ। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর পরিবার-পরিজন ছেড়ে ছিলেন হোম আইসোলেশনে। মনে সাহস রেখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাসিবুর রহমানের নিবিড় পর্যবেক্ষণে দীর্ঘ এক মাসের মাথায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিনি।

এবিষয়ে ডাঃ মো. আবুল হাশেম সবুজ বলেন,দেশের এই সংকটকালে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কখন যে শরীরে করোনাভাইরাস আক্রমণ করে তা টের পাইনি। দায়িত্ব পালনের সময় পিপিই, চশমা, হ্যান্ডগ্লাভস, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সহ সব ব্যবহার করেছি। কিন্তু তারপরও করোনায় আক্রান্ত হই। তিনি আরো বলেন, গত ২৮ মে রাত ২টার দিকে হঠাৎ শরীরে জ্বর আসে। সাথে সাথে আমি পরিবারের সঙ্গে যে ঘরে ছিলাম তা ত্যাগ করে আলাদা ঘরে চলে যাই।

সকালে স্ত্রী বলে, ‘তুমি এখানে কেন?’ আমি উত্তরে বলি, ‘আমার জ্বর আসছে। এখন থেকে আমি আলাদা রুম ও বাথরুম ব্যবহার করব। তোমরা কেউ এখানে আসবে না’। এই দিনই অসুস্থতার কথা আমার কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। ৩০ মে সকালে হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেই। ২ জুুন বিকেলে হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানায় আমার করোনা পজিটিভ এসেছে।

সংবাদ পাওয়ার পর আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকি। বিষয়টি আমার কর্তৃপক্ষ জানার পর তারা আমার শারীরিক খোঁজ-খবর নেন এবং আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। শুরু হয় হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা। আমাকে ঔষুধ দেয়া হলো। সেগুলো নিয়মিত সেবন করেছি।

এছাড়া সকালে ফজরের নামাজের পরই গরম পানিতে লবণ দিয়ে গার্গল করেছি। এটা দিনে ৪/৫ বার করতাম। পানিতে লং, এলাচি, গোলমরিচ, দারুচিনি, তেজপাতা ও আদা দিয়ে গরম করে ধোঁয়া নিতাম দিনে ৪/৫ বার। কখনো কখনো এই মসলা মিশ্রণ গরম পানি লেবু দিয়ে খেতাম। মাঝে মাঝে গ্রিন টি খেতাম। লেবু, মাল্টা, লটকন, আম, আপেল, আমলকি সহ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ দেশী ফলমূল খেয়েছি নিয়মিত। স্বাভাবিক ভাত, মাছ, ডিম, দুধ, ডাল খেয়েছি। যখনি মনে হয়েছে কিছু না কিছু মুখে দিয়েছি। তবে, এসময় খাবারের গন্ধ এবং স্বাদ পাইনি বললেই চলে।

মহান আল্লাহর রহমতে এবং আমার কর্মস্থলের প্রধান কর্মকর্তা ডা. হাসিবুর রহমান স্যার সহ হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সদের আন্তরিকতায় খুব দ্রুতই স্বাস্থ্য ভালো দিকে চলে আসে। আমার করোনা পজেটিভ আসায় একই সময় আমার স্ত্রী ও দুই ছেলে সহ পরিবারের সকলের করোনা পরীক্ষা করা হয়। মহান আল্লাহর রহমতে তাদের সকলের করোনা নেগেটিভ আসে। সঙ্গে সঙ্গে আমি মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।

আক্রান্ত হওয়ার ৯ম এবং ১৭তম দিন দুইবার নমুনা দেই। পরপর দুইবার করোনা পজেটিভ আসায় কিছুটা হতাশ ছিলাম। পরে ২৯ জুন আবার নমুনা দিলে মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে সে পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ আসে। সেই থেকে আস্তে আস্তে খাবারের গন্ধ এবং স্বাদ পেতে শুরু করি। পরে সম্পুর্ণ সুস্থ হয়ে আবার নিজ কর্মস্থলে যোগ দেই।

উল্লেখ্য, ডাঃ মোঃ আবুল হাশেম চাকুরী জীবনের শুরুতে উপজেলার জগন্নাথদীঘি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করে বেশ সুনামের সাথে কাজ করে আসছিলেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে ইনচার্জের দায়িত্ব পান এবং সুনামের সাথে অর্পিত দায়িত্ব অদ্যবদি পালন করে আসছেন। তিনি উপজেলার গুনবতী ইউনিয়নের কর্তাম গ্রামের হাজী আবুল বাশারের বড় ছেলে।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা