March 29, 2024, 3:50 pm

ভারতের রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব বিল :প্রতিবাদে উত্তাল উত্তর-পূর্ব ভারত, সেনা মোতায়েন

১১ ডিসেম্বর ২০১৯, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্ট :

 

লোকসভার পর বুধবার (১১ ডিসেম্বর) রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিলটি নিয়ে রাজ্যসভায় চলছে আলোচনা। শেষ পর্যন্ত সদনে বিলটি মোদী সরকার পাস করিয়ে নিতে পারবে কিনা— তা স্পষ্ট হবে ভোটাভুটির পরেই। কিন্তু তার আগে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিকাল থেকে প্রতিবাদের যে আগুন ধিকিধিকি করে জ্বলতে শুরু করেছিল উত্তরপূর্ব ভারতে, তা এদিন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) আসাম ও ত্রিপুরা তো বটেই, ওই অঞ্চলের বাকি সব রাজ্যতেই মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন সকাল থেকেই। আসামের ডিব্রুগড়, জোরহাট, তিনসুকিয়া, শিবসাগর জেলায় জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে একাধিক দোকান ও বাড়িঘর। বিলটি পাস হলে আরও একবার ঘরছাড়া হতে হবে এই আতঙ্কে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন মানুষ। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে, ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে এই বিক্ষোভ, দিন যত এগিয়েছে, ততই আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৫ হাজার আধা সেনা মোতায়েন করা হয়েছে অসমে। ১০টি জেলায় সন্ধ্যার পর থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা। ২ হাজার আধা সেনা জওয়ানকে নিয়ে আসা হয়েছে জম্মু-কাশ্মীর থেকে। বাকি তিন হাজার আধা সেনা আনা হয়েছে ভারতের অন্যান্য প্রান্ত থেকে। তৈরি রাখা হয়েছে সেনাবাহিনীকেও।

 

বিলটির প্রতিবাদে বুধবার রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি ও শরিক আসাম গণপরিষদ জোট সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ দেখান বিরোধীরা। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) থেকেই দিনভর বিক্ষিপ্ত হিংসায় বারেবারে উত্তপ্ত হয়েছে উত্তরপূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্যটি। এই পরিস্থিতিতে বুধবার শেষ পর্যন্ত বিলটি পাস হয়ে গেলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে আন্দাজ করেই সবরকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল।

পাশাপাশি ত্রিপুরার পরিস্থিতিও ক্রমশ ঘোরালো হচ্ছে। আগরতলা এবং পার্শ্ববর্তী উপজাতিপ্রধান এলাকাগুলিতে টায়ার জ্বালিয়ে চলছে বিক্ষোভ। রাস্তায় নেমে এসেছেন সাধারণ মানুষ। এই অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে ত্রিপুরায় দুথমাসের একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। ত্রিপুরার অবস্থা এতটাই খারাপ যে সেখানে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) থেকেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে মোবাইল পরিষেবা। ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কয়েক জায়গায়। ত্রিপুরা ও আসামের বেশ কয়েকটি জেলার সঙ্গে ভারতের মূল ভূখণ্ডের যোগযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন। অসমে মঙ্গলবার ১১ ঘণ্টার বন্‌ধ ডেকেছিল নর্থ ইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন। বুধবার বন্‌ধ না থাকলেও গুয়াহাটি শহর-সহ ওই রাজ্যের ১০টি জেলা বন্‌ধের চেহারা নেয়। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীকে বিক্ষোভের ভয়ে তার কনভয়ের রুট বদলাতে হয়েছিল। আর বুধবার একাধিক মন্ত্রী ও শাসক দলের শীর্ষ নেতাদের বাড়ির সামনে তুমুল বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিলের বিরোধীরা।

গুয়াহাটি শহরের বিভিন্ন এলাকায় বুধবার সকাল থেকে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের কুশপুতুল জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো চলেছে। ডিব্রুগড় এবং জোরহাটে সিআরপিএফ-র (সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স) জওয়ানদের সঙ্গে হাতাহাতিও শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভকারীদের। দুলিয়াজান জেলায় অয়েল ইন্ডিয়া অফিসে কর্মীদের ঢুকতে বাধা দেয় বিক্ষোভকারীরা।

ফের সোচ্চার হয়েছেন সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী এবং বৃহত্তর সমাজের প্রতিনিধিরা। এর আগেও একাধিকবার মোদী সরকারের নানা পদক্ষেপে প্রকাশ্যেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এবার তারা মুখ খুললেন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করেছেন অমিত শাহ।

বিতকির্ত এই বিলের প্রক্রিয়া যথাযথ নয় বলেই মনে করছেন প্রতিক্রিয়াশীল এই মানুষরা। তাদের পক্ষ থকে এক বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে স্বাক্ষর করেছেন অপর্ণা সেন, জাভেদ আখতার, নাসিরউদ্দিন শাহ, অ্যাডমিরাল রামদাস, মল্লিকা সারাভাই, প্রভাত পট্টনায়ক সহ আরও অনেকে।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ভারত সব ধর্মের মানুষের দেশ। এখানে মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশবাসীকে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য উপযুক্ত নথি দেখাতে বলাটা অন্যায়। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন বিচারপতি, আইনজীবী, কর্মী, লেখক, শিক্ষাবিদ, অভিনেতা প্রমুখ সংবেদনশীল মানুষরা।

তারা সোচ্চারে সিএবি (সিটিজেনস অ্যামেন্ডমেন্ট বিল) প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেই সঙ্গে এনপিআর এবং এনআরসি-রও বিরোধিতা করেছেন। গণতন্ত্রবিরোধী এই বিল এরই মধ্যে লোকসভায় পাস করানো হয়েছে। ভারতের অনেকেই মনে করছেন, সংবিধানের সত্ত্বাকে অস্বীকার করে স্রেফ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে জোর করে বিলটি পাস করানো হয়েছে।

সূত্র :জাগরণ।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা