March 29, 2024, 5:45 am

নুসরাত হত্যার বিচার ও কিছু কথা

এম. আবদুল্লাহ,মহাসচিব, বিএফইউজে

এক রায়েই দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে দেখে (অন্ততঃ ফেসবুক নিউজ ফিডের উচ্ছ্বাসে) আমি আপ্লূত। সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যা মামলায় পুলিশী তদন্তে ১৬ জন অভিযুক্ত হয়েছেন। জানতে ইচ্ছে করছে, চার্জশিটে কি ১৬ জনের অপরাধ সমানভাবে উঠে এসেছে? সাজাটাতো হলো অভিন্ন। এমন নির্ভুল পুলিশী তদন্ত হলেতো বিচারের নামে কালক্ষেপণের দরকার পড়ে না! পুলিশ চার্জশিটে যে শাস্তির সুপারিশ করবে তা কার্যকর করে দিলেই হয়!

নুসরাতের মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপজেলা পর্যায়ের দুই শীর্ষ নেতাসহ সরকারি ঘরানার লোকজন রয়েছেন। এ মামলায় দন্ডিত অনেকেই ক্ষমতার দম্ভে বেপরোয়া আচরণ করেছেন এলাকায়। খোদ অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাও ক্ষমতাদর্পে নৈতিকভাবে স্খলিত ও অধপতিত হয়েছিলেন। শেষ দিকে ওলামা লীগের নেতা হিসেবে নিজেকে জাহির করে সহকর্মীদের সঙ্গে যাচ্ছে-তাই আচরণ করছিলেন। ওস্তাদ ও ওস্তাদ-সমতুল্যদের সঙ্গে তার আচরণ নিয়ে এলাকায় বিস্তর আলোচনা আছে। তার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও এন্তার অভিযোগ। যাদের প্রশ্রয়ে তার স্খলন তাদের অনেককে এখন অনুতাপ করতে দেখা যাচ্ছে। ছাত্র জীবনে সিরাজউদ্দৌলা অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। একাডেমিক শিক্ষায় ঈর্ষণীয় ফলাফল তার। তুখোড় ওয়ায়েজ হিসেবেও তাঁকে দেখেছি। কিন্তু স্খলন শুরুর পর তা অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে।

নুসরাত হত্যায় অভিযুক্তদের দায় দুনিয়ার আদালতে প্রমাণিত। নুসরাতের পরিবারসহ অনেকেই খুশি। আবার দন্ডিতদের স্বজনরা আহাজারি করে নির্দোষ দাবি করছেন এবং বলছেন, ফাঁসানো হয়েছে। ১৬টি পরিবারে মাতম চলছে। বিচার প্রভাবিত হওয়ার অভিযোগও করছেন তারা। আল্লাহর আদালতে বিচার দিচ্ছেন। কার পাপের প্রায়শ্চিত্ত কে করেন বাংলাদেশ এটাই এক বড় প্রশ্ন। শঙ্কা জাগে, আইনের শাসনের ডুগডুগি বাজাতে কেউ কেউ বলির পাঠা হননিতো? আল্লাহ ভালো জানেন। না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কয়েক দিন আগে সপ্তাহখানেন সোনাগাজী থেকে যা শুনে এসেছি, রায়ে তার প্রতিফলন আছে। রায়ের এক সপ্তাহ আগে অন্যতম অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রহুল আমিন পদ হারানোর মধ্যেই অনেকে বার্তা পেয়েছেন।

নুসরাত আমার এলাকার মেয়ে। তার করুন মৃত্যু আমাদের কাঁদিয়েছে। সুবিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিলাম। রেকর্ড গড়ে স্বল্প সময়ে বিচার সম্পন্ন হয়েছে, তা অভিনন্দনযোগ্য ও স্বস্তির। পাশাপাশি অস্বস্তিকর হচ্ছে নুসরাতের ভাইয়ের মন্তব্য। রায়ের পর তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী চেয়েছেন বলেই দ্রুততম সময়ে সুবিচার পেয়েছি। তার অর্থ কী দাঁড়াল? সুবিচার ও দ্রুত বিচার পেতে হলে প্রধানমন্ত্রী চাইতে হবে? কেন? তা হলে আইন নিজের গতিতে চলার যে বুলি আওড়াই তা স্রেফ ভাঁওতাবাজি? তাছাড়া একজন বিচারক যখন জানবেন, এই মামলার রায়ের দিকে খোদ প্রধানমন্ত্রী তাকিয়ে আছেন তখন চাপমুক্ত ন্যায়বিচার করা তার পক্ষে কতটা সম্ভব?

আবার এই প্রশ্নওতো উঠতে পারে যে, সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ক্ষেত্রবিশেষে চাইবেন কেন? সব ক্ষেত্রে কেন নয়? যারা বিভিন্নভাবে খুন হচ্ছেন, নৃশংসতা ও বর্বরতার শিকার হচ্ছেন, তাদের সবারই রক্তের রং লাল। তাদেরও নুসরাতের মত মা, বাবা, ভাই আছেন। আছেন আরও অনেক স্বজন। প্লিজ, সব খুন, গুম ও পাশবিকতার দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচারের পথ সুগম করুন।

২৪/১০/২০১৯
রাত ৯টা


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা