April 19, 2024, 9:36 am

সম্বল ভাঙা সাইকেল, কুঁড়েঘরে বাস করে এখন তিনি মন্ত্রী

১ জুন ২০১৯, বিন্দুবাংলা টিভি. কম ,

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: শহুরে জীবনের বিলাসিতা, চাকচিক্য থেকে অনেক দূরে তার বসবাস। বালাসোরের এক ঝুপড়ি ঘরই তার স্থায়ী ঠিকানা। একটা ভাঙা বাইসাইকেলই তার নিত্যচলার সঙ্গী। ওড়িশ্যার ‘মোদিথ খ্যাত সেই প্রতাপ চন্দ্র এবার নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছেন।

লোকসভা নির্বাচনে ওড়িশ্যার বালাসোর আসনে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। বিজু জনতা দলের প্রার্থী রবীন্দ্র কুমার জেনাকে হারিয়েছেন ১২ হাজার ৯৫৬ ভোটের ব্যবধানে।

তবে নির্বাচনে জেতার বহু আগে থেকেই মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন প্রতাপ। যে কারণে রাজ্যের মানুষ তাকে ডাকেন ‘ওড়িশ্যার মোদিথ বলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাকে নিয়ে উন্মাদনা কম নয়। বিরল এক নেতার সাধারণ জীবন-যাপনের বহু ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে এসব সামাজিক মাধ্যমে।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন নরেন্দ্র মোদি। এরপর একে একে শপথ নেন প্রায় সব মন্ত্রী। শেষ দিকে এসে রাষ্ট্রপতির সচিব ঘোষণা করলেন, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এবার শপথ নেবেন প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গি। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো করতালি। দেখা গেল একেবারে সাধারণ গোছের সাদামাটা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা, উশকোখুশকো চুলের এক ব্যক্তি ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন মঞ্চের দিকে। সাদামাটা এই মানুষটি নতুন পাঞ্জাবি কিনেছেন শপথ অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্যই।

লোকসভার সদস্য হওয়ার আগে প্রতাপ সারেঙ্গি ওড়িশ্যার নীলগিরি আসন থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন। ২০০৪ ও ২০০৯ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জেতেন তিনি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।

বিয়ে করেননি, কুঁড়েঘরে মায়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। গত বছর মা মারা যাওয়ার পর এখন একা। পাড়ার ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাই তার অবসরের সঙ্গী। সহজ-সরল উপকারী মানুষটি গ্রামের সবার কাছে একেবারে ঘরের লোক বলে পরিচিত।

ওড়িশ্যার নীলগিরির গোপীনাথপুর গ্রামে এক গরিব ঘরে জন্ম প্রতাপ সারেঙ্গির। স্থানীয় ফকির কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেছেন। কিন্তু চাকরিতে মন বসে না। ছোটবেলা থেকেই টান আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোতে। সেসব নিয়ে লেখালেখিও করেছেন বিস্তর।

একটু বড় হলে চলে যান হাওড়ার বেলুড় মঠে। ইচ্ছা ছিল, সাধু হয়ে দেশ আর মানুষের সেবা করবেন। কিন্তু মঠের সন্ন্যাসীরা যখন জানলেন, তার বাবা মারা গেছে, বাড়িতে মা একা, সঙ্গে সঙ্গে ফেরত পাঠিয়ে দেন মায়ের সেবা করার জন্য। মঠের সাধু না হতে পারলেও, তাদের মতো সাধারণ জীবনযাপনের অভ্যাস কখনো ছাড়েননি প্রতাপ।

এই সহজ সরল মানুষটি নির্বাচনে জেতায় স্থানীয়রা যেমন খুশি, খুশি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। মোদি ওড়িশ্যায় গেলে সারেঙ্গির সঙ্গে অবশ্যই দেখা করেন। শুধু বিজেপির রাজনীতিই নয়, তাদের মধ্যে মিল আছে আরেক জায়গাতেও। দুথজনেই রামকৃষ্ণ মিশনের সাধু হতে গিয়েছিলেন, দুথজনকেই সন্ন্যাসীরা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা